বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা : রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা নিকুঞ্জে সংঘটিত আলোচিত ব্যবসায়ী অপহরণ মামলায় তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে। নিকুঞ্জ–২-এর ব্যস্ত সড়ক থেকে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনায় এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ‘গুন্ডা জসিম’সহ গ্রেপ্তার সাতজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) খিলক্ষেত থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মো. ফজলে রাব্বি গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড প্রসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আদালতের আদেশের লিখিত কপি এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। আদেশ হাতে পাওয়ার পরপরই অভিযুক্তদের খিলক্ষেত থানায় এনে পর্যায়ক্রমে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, রিমান্ডে এনে অপহরণের মূল পরিকল্পনা, আর্থিক লেনদেন, সহযোগী চক্র, পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যবহৃত যানবাহন এবং ভবিষ্যতে সংঘটিত হতে পারা অপরাধ পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের আশা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় নিকুঞ্জ–২ এলাকার স্পাইসি হোটেলের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী জিয়াউল মাহমুদকে একটি কালো রঙের হাইয়েস গাড়িতে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। হঠাৎ এই অপহরণে এলাকাজুড়ে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিকুঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে আসা ‘গুন্ডা জসিম’ই এই অপহরণের নেতৃত্ব দেয়। পুলিশের ধারণা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা এবং দখলদারির বার্তা দেওয়াই ছিল এই অপহরণের মূল উদ্দেশ্য।
ঘটনার পরপরই খিলক্ষেত থানা পুলিশ প্রযুক্তিগত নজরদারি জোরদার করে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কল ডাটা এবং গাড়ির গতিবিধি বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপহরণকারী গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত ব্যবসায়ী জিয়াউল মাহমুদকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ অভিযানে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জসিম ওরফে ‘গুন্ডা জসিম’, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুব মুন্সী, অনিক, মো. আলমগীর হোসেন, মাহাদী সরকার রাকিব এবং শিল্পী আক্তার ওরফে রানীকে। পুলিশ জানায়, এই চক্রের রাজা মিয়া ও তারেক আজিজসহ আরও কয়েকজন সদস্য এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা নং–০৯, তারিখ–০৯/১২/২০২৫, দণ্ডবিধির ৩৬৫/৩৪ ধারায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
‘গুন্ডা জসিম’সহ প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার এবং আদালতের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় নিকুঞ্জ এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্য সন্ত্রাস ও ভয়ভীতির যে রাজত্ব চলছিল, তার বিরুদ্ধে এবার কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে ভারতের নসিয়ত অগ্রহণযোগ্য : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নিকুঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



