আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমরা রূপকথার গল্পে পড়েছি পাষাণপুরীর কথা। কোনো দুষ্ট জাদুকর একটা রাজ্যের সবকিছুকে পাথরে পরিণত করে রেখেছে। ওই রাজ্যে আর কিছুই জেগে নেই। হাতিঘোড়া, মানুষজন সবাই পাথর। সেই রাজ্যের রাজকন্যার মাথার কাছে থাকে সোনার কাঠি আর রুপার কাঠি। গল্পের নায়ক রাজপুত্তুর সেই রাজ্যে যায়, সোনার কাঠি আর রুপার কাঠির জায়গা বদল করে, অমনি পুরো রাজ্য জেগে ওঠে। রাজকন্যা তো জাগেই। তারপর রাজপুত্র আর রাজকন্যার বিয়ে হয়। তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করে।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস (১৯২৭-২০১৪) নামের একজন বিখ্যাত লেখক ছিলেন। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮২ সালে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচুড’–এ একটা মহামারির কথা আছে, যাতে একটা অঞ্চলের কোনো লোক আর ঘুমাতে পারে না। তারা একযোগে অনিদ্রায় ভুগতে থাকে।
কিন্তু বাস্তবে এই পৃথিবীতে এমন রোগ এসেছিল, যাতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছিল। ১৯১৬ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে এই রোগের বিস্তার ঘটে। এটা মস্তিষ্কের একটা রোগ, যার কারণ আর প্রতিকার সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা খুব কমই জানেন। এই রোগের নাম এনসেফালিটিস লেথারজিয়া। এই রোগে আক্রান্তরা প্রথমে গলাব্যথা অনুভব করত বা সর্দিজ্বরে ভুগত। এরপর তারা ঘুমিয়ে পড়ত। কেউ কেউ খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই ঘুম চলতেই থাকত। প্রায় অজ্ঞানের মতো থাকত তারা বছরের পর বছর। কোনো কথা বলত না, নড়াচড়া করত না। এই রোগে আক্রান্তদের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা গিয়েছিল। কেউ কেউ সেরে উঠেছিল, অবশিষ্টরা সারাটা জীবন নানা ধরনের কষ্ট বয়ে বেড়াত। ১৯২০-এর দশকে এই রোগ নিয়ে ৯০০০-এর মতো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখা হয়েছিল। এই রোগটা যেমন হঠাৎ এসেছিল, হঠাৎই পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছিল।
‘এয়েকেনিংস’ (১৯৯০) নামের সিনেমা এই রোগ এবং রোগীদের নিয়ে তৈরি। সিনেমায় রবার্ট ডি নিরো, রবিন উইলিয়ামস প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পী অভিনয় করেন।
১০ লাখ লোককে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া এই ভয়ংকর রোগ সম্পর্কে ইদানীং কেউ আর কথা বলে না, যেন মানুষ এই রোগের কথা ভুলেই গেছে।
(সূত্র: পপসাই ডট কম, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।