জুমবাংলা ডেস্ক : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশের জনসাধারণের বড় একটি অংশ খোলা, অপরিচ্ছন্ন তেল ব্যবহার করেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ বাজারের খোলা তেল। আমরা কালকেই মিল থেকে ক্ষতিকারক তেল বের হওয়া বন্ধ করে দিতে পারি, কিন্তু এতে তেল সরবরাহে ব্যাহত হবে। তবে আইন মেনেই ব্যবসায়ীদের চলতে হবে। তাদেরকে সচেতন করতে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে তেলের বৃহৎ পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোলা তেলে ক্ষতিকারক দিকসমূহ তাদের অবহিত করেন।
খোলা তেলের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে পাহাড়ের মতো করে হাজার-হাজার ড্রাম সাজানো দেখলাম। ড্রামগুলো বিভিন্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসছে। বিদেশ থেকে কাঁচামাল হিসেবে আসা কেমিক্যাল ব্যবহারের পরে খালি ড্রামগুলো আনা হয়। ড্রামগুলো তেল ও কস্টিক সোডা দিয়ে একজন লেবার পরিস্কার করে থাকেন। সেই লেবারের কিন্তু স্বাস্থ্যসচেতনতা নেই। ড্রামগুলো আদৌ কতটুকু পরিস্কার হচ্ছে, সেটিও প্রশ্নের দাবি রাখে। ড্রামগুলো এখান থেকে বিভিন্ন রিফাইনারিতে চলে যাচ্ছে। পুরোপুরি পরিস্কার না হওয়া ও কেমিক্যাল থাকা খোলা ড্রামগুলোতেই সেখানে তেল ভরা হচ্ছে। এরপর ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে এখানকার ব্যবসায়ীরা ড্রামভর্তি তেল এখানে নিয়ে আসেন। এখান থেকেই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তেলগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তেলগুলো কোন মিল থেকে আসছে, মেয়াদ আছে কি না, এগুলো পাম তেল নাকি সয়াবিন তেল তা আমরা ধরতে পারছি না। গত রমজানের সময় আমরা দেখতে পেলাম, হঠাৎ করেই বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে গেলো। কিন্তু বেশি টাকা দিলে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছিলো। আমরা কিন্তু খাটের নিচ থেকে, মাটির নিচ থেকে তেল উদ্ধার করলাম। সেক্ষেত্রে বোতলজাত তেল হলে আমরা কিন্তু জানতে পারবো সেটি কোন কোম্পানির। সেজন্য দ্রুত সমস্ত তেল আমরা শতভাগ বোতলজাত বা প্যাকেটজাত করবো। এতে খরচও তেমন বাড়বে না। কেননা, আমরা যদি পালস ব্যাগে ২৫০ মিলি বা ৫০০ মিলি প্যাকেট করি, তাহলে দুই-তিন টাকা বাড়বে। কিন্তু এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি ৩০-৪০ বছরের তরুণ- যুবকেরাও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ঘাটতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রচুর শিল্পকারখানা আছে। এখানে অন্যান্য জেলা থেকে আসা বিপুলসংখ্যক লোক বাস করেন। এত বড় জনগোষ্ঠীর জন্য এই জেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মাত্র একজন অফিসার ও একজন কম্পিউটার অপারেটর আছেন। আমরা চেষ্টা করছি এটি বিস্তৃত করতে। ঢাকায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়টি টিম কাজ করে। আমাদের অফিসারদের ঈদের ছুটিও বাতিল করতে হয়। তাদেরকে অনেক দৃশ্যমান কাজের পাশাপাশি অদৃশ্যমান কাজও করতে হয়। অনেকসময় আমরা অভিযানের স্বার্থেই অভিযানের আগে কিছু গোপনীয়তা রক্ষা করি। তবে এখানে আমাদের যিনি কর্মকর্তা আছেন, তাকে বলবো আপনাদের সঙ্গে যেন আরেকটু সমন্বয় করে নেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা, নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক সোহেল আকতার প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।