আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নাম তার ইসাবেল গ্যাস্টনবেরি। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। বর্তমানে তার বয়স ৩১ বছর। বিয়ে করেছিলেন মার্কিন এক তরুণকে। তার নাম মাইকেল। কিন্তু বিয়ের দুই বছর পর কোনও কিছু না জানিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যান মাইকেল। অথচ মাইকেলের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্য স্পাউস ভিসা ও বিয়ের জন্য ৫৩ লাখ টাকারও বেশি করেছিল ইসাবেলের পরিবার।
জানা গেছে, আট বছর আগে প্রথম দেখা হয় ইসাবেল ও মাইকেলের। প্রথম দেখাতেই প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় তরুণী। বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই আচমকাই যেন সবকিছু বদলে গেল। উধাও হয়ে গেলেন স্বামী।
কী কারণে এমন করলেন ওই মার্কিন যুবক? অন্য কোনও সম্পর্কে বাঁধা পড়েছেন? না কি শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপাকিভাবে বসবাসের জন্যই বিয়ের বাহানা করেছিলেন? আজও তার কোনও জবাব পাননি ইসাবেল।
৩১ বছরের ওই তরুণীর দাবি, কোনও কারণ না জানিয়েই বিয়ের দু’বছর পর তার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন মাইকেল। তাদের একত্রবাসের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছেন। বাড়িতে যেসব পরিচারক এনেছিলেন তার স্বামী, তারাও প্রায় সকলে গায়েব। এমনকি, তার মোবাইল নম্বরও ব্লক করে দিয়েছেন স্বামী। অথচ তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে আড়ম্বরের অভাব ছিল না।
ইসাবেলের আরও দাবি, ২০১৮ সালে তাদের বিয়ের জন্য মা-বাবার কাছ থেকে ৫০,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ লাখ টাকারও বেশি) ধার নিয়েছিলেন। এমনকি, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্য স্পাউস ভিসা পেতে যে ১০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা) খরচ হয়েছিল স্বামীর, তা-ও দিয়েছেন তার মা-বাবা।
আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা মাইকেলের সঙ্গে ইসাবেলের প্রথম দেখা হয়েছিল ডালাসে। সেটি ছিল ২০১৫ সাল। প্রথম দেখাতেই নাকি তার প্রেমে পড়েছিলেন ইসাবেল। তার কথাবার্তা, আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েক মাস প্রেম করার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তড়িঘড়ি বাগদানও সেরে ফেলেন দু’জন।
বাগদত্তের সঙ্গে একত্রবাসের জন্য ২০১৮ সালে আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছিলেন ইসাবেল। একসঙ্গে সে দেশ ছেড়েছিলেন তারা। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ভিসার আবেদন করেন মাইকেল। সে বছরই সিডনির বোটহাউস পাম বিচে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সেরে ফেলেন তারা।
ইসাবেলের দাবি, তাদের রূপকথার মতো বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন দু’পক্ষের আত্মীয়-পরিজনেরা। বিয়েতে ‘বেস্টম্যান’ হয়েছিলেন মাইকেলের এক বন্ধু। বিয়ের যাবতীয় খরচ দিয়েছিলেন তার মা-বাবা। বিয়ের অন্যান্য খরচের জন্য তার ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নেওয়ার শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
সিডনিতে তাদের স্বপ্নের সংসারে আচমকাই ছন্দপতন হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ইসাবেলদের বিয়ের ঠিক দু’বছর ৪ মাস পর। মাইকেলের স্পাউস ভিসার আবেদন অনুমোদিত হওয়ায় খবর উদযাপন করতে এক সন্ধ্যায় একত্রে রাতের খাওয়া সারতে রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন তারা। খাওয়া-দাওয়া সেরে পরের দিন নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে হতবাক হয়ে যান ইসাবেল।
‘ডেইলি মেইল’র কাছে ইসাবেলের দাবি, মাইকেলের ভিসা পাওয়ার পরের দিন অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে স্বামীর দেখা পাননি। এমনকি, প্রায় সমস্ত আসবাবপত্র থেকে শুরু করে গায়েব পরিচারকেরাও।
বিস্ময়ের যেন আরও বাকি ছিল ইসাবেলের। তার দাবি, স্বামীর সঙ্গে একত্রে অভিবাসন বিভাগে যে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, তাতে তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছিল। তার সব ক্রেডিড কার্ড ঋণ নেওয়ার চরম সীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল বলে দেখাচ্ছিল। এমনকি, স্বামীকে ফোন বা মেসেজ করলেও তার মোবাইল নম্বর ‘ব্লকড’ শোনাচ্ছে।
কোনও কিছু না জানিয়েই উধাও হয়ে যান মাইকেল। মাসখানেক ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার কোনও খবর পাননি ইসাবেল। মাইকেল কোথায় গিয়েছেন, সে সম্পর্কে নাকি কিছুই জানা ছিল না তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-পরিজন থেকে বন্ধুবান্ধবদের।
ইসাবেল বলেন, “সকলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল আমার স্বামী। আমাদের সমস্ত বন্ধুবান্ধব, ওর পরিবারের লোকজন থেকে বিয়ের দিন যে সমস্ত অতিথিরা এসেছিলেন, তাদের কেউ জানতেন না, মাইকেল কোথায় রয়েছে!”
এত মাস পর এই ঘটনা নিয়ে চিন্তা করলে ইসাবেলের চোখে অনেক ইঙ্গিত ধরা পড়ে। তিনি বলেন, “গায়েব হওয়ার আগে থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছিল মাইকেল। এখন মনে পড়ে, কত রাত বাইরে কাটাত। মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন একেবারে অচেনা মানুষকে বিয়ে করেছিলাম।”
ইসাবেলের দাবি, উধাও হওয়ার কয়েক দিন আগে মাইকেল কুইন্সল্যান্ডে গিয়ে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সেখানেই তার ঘরবাড়ি কেনা থেকে পরিবার শুরু করার কথাও বলেছিলেন। ইসাবেলের কথায়, “আমি জানি না, ওর কী মতলব ছিল। তবে এখন এ সব কিছুই অর্থহীন মনে হয়।”
স্বামীর গায়েব হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে ইসাবেলের মনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তার মন্তব্য, “আমার মনে হয়, আমাদের বিয়ে হয়েছিল বটে। তবে ওর কাছে সেসব অতীত হয়ে গিয়েছে। আমার মুখের উপর সংসার ছাড়ার কথা বলার সাহস ছিল না বলেই হয়তো এভাবে চলে গেছে। হয়তো অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্যই এসব করেছে ও।”
ইসাবেলের দাবি, সিডনিতে সংসার পাতার সময় ভিসার আবেদনের জন্য স্বামীকে ১০,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকার বেশি) দিয়েছিলেন তার মা-বাবা। তবে মাইকেল গায়েব হওয়ার পর অভিবাসন দফতরে অভিযোগ দিলেও তার ভিসা বাতিল হয়নি।
স্বামী গায়েব হওয়ার বছরখানেক পর অবশ্য নতুন করে সংসার পেতেছেন ইসাবেল। স্কুলের বন্ধু ম্যাক্সকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাদের এক সন্তানও রয়েছে। তার আগে অবশ্য আইন মেনে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন তিনি।
২০২১ সালে অবশ্য মাইকেলের সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল ইসাবেলের। কী কারণে গায়েব হন তিনি? প্রশ্ন করলে মাইকেল নাকি বলেছিলেন, আবার সিঙ্গল থাকতে চান।
তার জীবনের এই পর্বের পর ইসাবেলের মন্তব্য, “এই ঘটনার আগেই বহু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। তবে সেগুলোকে তেমন পাত্তা দিইনি। ফলে আমার মনে হয়, প্রেমে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।” সূত্র: ডেইলি মেইল
দৈনিক মাত্র ৬ ঘণ্টা কাজ, মাসে ৫ লাখ টাকা বেতনেও মিলছে না শ্রমিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।