জুমবাংলা ডেস্ক : বিগত বছরের তুলনায় এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কুষ্টিয়া-মেহেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় বেশ ভালো উৎপাদন হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ফলন বেশি হচ্ছে এবার।
নতুন প্রযুক্তিতে আবাদ করা এ পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে ১২০-১৪০ মণ। এতে বিঘা প্রতি লাখ টাকার ওপরে লাভ হচ্ছে কৃষকদের। পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে রয়েছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি আধুনিক চাষের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে।
ভালো ফলন এবং দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি প্রণোদনায় ১৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল, যাতে গড়ে ১৩.৪৩ মেট্রিকটন ফলন হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি প্রণোদনায় ১৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল, গড়ে ১৬.৬১ মেট্রিকটন ফলন হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি প্রণোদনায় ১৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ফলন আগের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেহেরপুর জেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য ১২০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৭০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সম্প্রসারণ করে চাষাবাদ করেছেন। হেক্টর প্রতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮.৬ মেট্রিকটন। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষকদের সবচেয়ে বেশি চাষ করেছেন রেডএন-৫৩ এবং বিপ্লব জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ।
এছাড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় দুই জেলার কৃষকদের মধ্যে ৬২টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রকল্পের আওতায় ২০ শতাংশ জমির প্রদর্শনী নিয়ে এখন বিঘার পর বিঘা চাষ করছেন কৃষকরা।
এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের ওপরে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের কৃষক আসাদ আলী। প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ২০ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনীর জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন। এর পাশাপাশি তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ উদ্যোগে আরও দুই বিঘা জমিতে রেডএন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আমাকে বিনামূল্যে সার, বীজ, চারা তৈরির জন্য ছাউনি, পরিচর্যা বাবদ টাকা দিয়েছিল। আমি এর সঙ্গে আরও দুই বিঘা জমিতে এ পেঁয়াজের চাষ করেছি। দুই বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। যদি ৪০ টাকা কেজিও বিক্রি করি তাহলে আশা করছি দুই বিঘা জমি থেকে চার লাখ টাকার মতো পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারব। যে ২০ শতাংশ জমিতে প্রদর্শনীর জন্য চাষ করেছি। সেই পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করেছি। সেখানেও আমি দেড় লাখ টাকার ওপরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আমিই প্রথম এ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবার প্রায় ৪০-৫০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আগামীতে আরও চাষ বাড়বে।
একই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে এ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হতো না। কিন্তু এবার হচ্ছে। এ পেঁয়াজ খুবই ভালো হচ্ছে। আমি এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আগামীতে আরও দুই বিঘায় চাষ করব। কারণ এর ফলন অনেক বেশি। বিঘা প্রতি ১৩০-১৪০ মণ হিসাবে ফলন পাওয়া যাচ্ছে। দাম কম হলেও ফলনের জন্য আগামীতে বেশি চাষ করব।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষি ইদ্রিস আলী জানান, এ বছরই প্রথম আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রদর্শনীর জন্য ২০ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছি। যে ফলন দেখছি, আগামীতে পাঁচ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করব। শীতকালীন পেঁয়াজের তুলনায় দ্বিগুণ ফলন।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে শুধু কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, তা নয়, চাষিদের পাশাপাশি পেঁয়াজ পরিষ্কার করে অনেক নারীও লাভবান হচ্ছেন। মাঠ থেকে তোলা পেঁয়াজ পরিষ্কার করে তারা মণ প্রতি ৩০ টাকা করে পাচ্ছে। প্রতিদিন তারা পেঁয়াজ পরিষ্কার করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ খুবই লাভজনক। আমরা কৃষকদের প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের এ পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে কৃষকরা জাত ভেদে বিঘা প্রতি ১২০-১৪০ মণ ফলন পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তারা ভালো দাম পাচ্ছেন। আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সেই সঙ্গে প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, আমরা এ বছর ১২০০ কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছি পেঁয়াজ চাষের জন্য। মাঠে এবার রেডএন-৫৩ এবং বিপ্লব জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বেশ ভালো হয়েছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের জুনিয়র পরামর্শক ইমরুল পারভেজ জানান, যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তার ২৫-৩০ ভাগ পেঁয়াজ কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা উৎপাদনের পাশাপাশি পেঁয়াজ সংগ্রহ করার পর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে ক্ষতি কমানো যায়, সেজন্য কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে যশোর অঞ্চলে টেকসই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনীর জন্য তিন হাজারের বেশি স্থানে আবাদ করিয়েছি। সেই সঙ্গে কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান, সে চেষ্টা করছি। আশা করি, আগামীতে এ সময়ে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই কমবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (যশোর অঞ্চল) আবু হোসেন বলেন, বাজারে যাতে এ সময় পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকে, সেজন্য বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের মাধ্যমে আগামীতে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে। এছাড়া এটি কম সময়ের ফসল, সেই সঙ্গে বেশি লাভজনক, তাই কৃষকরাও বেশ আগ্রহী হয়েছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ক্ষেত পরিদর্শন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় আমরা যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, আগামীতে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। আগামী বছর থেকেই পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এমন জেলাগুলোতে পেঁয়াজের প্রণোদনা দ্বিগুণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।