ইয়াসিন রহমান ও আহমেদ মুসা : পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি এখন চরমে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি আমদানিতে ভারত টনপ্রতি ৮০০ ডলার নির্ধারণের খবরেই দেশের বাজারে হুহু করে বাড়াছে দাম। সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬৪-৬৫ টাকায় পেঁয়াজ পাওয়া এখন সোনার হরিণ। কারণ খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। যা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত ৯০ টাকা বেশি।
নতুন আমদানি দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। তার আগেই যে যার মতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে। তদারকি সংস্থার উদাসীনতার কারণে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোমবারের সর্বশেষ খবরে এমনটিই জানা গেছে। অথচ একই পেঁয়াজ শনিবার ১১০ টাকায় এবং রোববার ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। অপরদিকে দুইদিন আগেও ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। একদিন আগে ছিল ১০০-১১০ টাকা।
আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ সোমবার বিক্রি হয় ১২৫ টাকায়। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজও কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে পণ্যটি কিনতে ক্রেতাসাধারণ ভোগান্তিতে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পরও কর্তৃপক্ষ একেবারেই নির্বিকার।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা হেদায়াত উল্লাহ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। সরবরাহ থাকলেও বাড়াচ্ছে দাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদারকি সংস্থাগুলোর কোনো ধরনের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
শ্যামবাজারের আড়তদার শংকর চন্দ্র দাস বলেন, স্থলবন্দর ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পেঁয়জের মজুত শুরু করেছেন। দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য রাজধানীসহ সারা দেশে কম সরবরাহ করছে। যে কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তারা জানে দেশে কৃষকের কাছে এখন পেঁয়াজ নেই। আর মাঠ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। তাই তারা বাড়তি মুনাফা করতে এই এক মাসকে টার্গেট করেছে। যা তদারকি সংস্থার দেখতে হবে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সোমবার বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতিটন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় শনিবার এই সিদ্ধান্ত জানায়। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। যতদূর জানি রোববার থেকেই এই আদেশ কার্যকর হয়েছে। তবে সোমবার পর্যন্ত যেসব পেঁয়াজ স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাজারে আসছে তা আগের কম দামে এলসি করা পেঁয়াজ। কিন্তু দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এদিকে কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা আলুর মূল্য নিয়েও কারসাজি করছে। এর ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিকেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু সেই দাম কেউ একদিনের জন্যও মানেনি। সোমবারও প্রতিকেজি আলু ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা বেঁধে দেওয়া মূল্যের দ্বিগুণের বেশি। সরকারের নির্ধারিত দামের চাইতে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সোমবার আলু আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগ্রহী আমদানিকারকদের মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগেও অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আলু আমদানির পরিকল্পনা করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে ৭ অক্টোবর এর বিরোধিতা করে মতামত দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। ফলে তখন ব্যবসায়ীদের আলু আমদানির অনুমতি দিতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং আরও বেড়েছে। এমতাবস্থায় ডিমের পর আলুও আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক রাতের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এখানে ভারত থেকে আগের আমদানি করা ভালোমানের প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। একটু নিুমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২২ টাকা। একইভাবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে। আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত দামকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও আড়তদারদের যৌথ কারসাজিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ২৮ অক্টোবর ভারত সরকার পেঁয়াজের দাম প্রতিটন ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বাড়তি দামের সেই পেঁয়াজ আমদানির আগেই চট্টগ্রামে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। তারা আড়তদারকে সঙ্গে নিয়ে কারসাজি করে দুদিনে দিনে কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে। প্রতিকেজিতে ৪০ টাকার বেশি মুনাফা তুলে নিচ্ছে। দুইদিন আগেও ভারত থেকে আমদানি করা
পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সোমবার ওই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। কিছুটা নিুমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১৫ টাকার বেশি দামে।
ভোক্তারা বলছেন, ভারত মাত্র রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। পাইকারি কিংবা খুচরা বাজারে ওসব বাড়তি মূল্যের এক কেজি পেঁয়াজও আসেনি। অথচ ভোক্তাদের কাছ থেকে একদিনেই কেজিতে ৩০ টাকা বাড়তি নিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চট্টগ্রামে আলু বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। অথচ আলু সরবরাহ আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।