রাজবাড়ীতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এর মধ্যে মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম এক লাফে বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা, যা শিগগিরই খুচরা বাজারেও প্রভাব ফেলবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে রাজবাড়ীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সোনাপুরে দেখা যায়— কৃষকরা প্রকারভেদে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। অথচ গত রোববার একই বাজারে সর্বোচ্চ দাম ছিল মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকেরা সন্তুষ্ট। তাদের দাবি, সারা বছর যেন এই দামে বিক্রি করতে পারেন এবং বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা বন্ধ রাখতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের মতে, এলসি বন্ধ থাকা ও কৃষকের ঘরে মজুত থাকায় বাজারে সরবরাহ কম, ফলে দাম বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, রাজবাড়ী দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের অন্যতম সমৃদ্ধ জেলা— দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ আসে এখান থেকে, যা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রাখে জেলাটিকে। ৫ উপজেলার মধ্যে কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশায় পেঁয়াজের আবাদ সবচেয়ে বেশি। এবছর হালি পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকের মজুরি— সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টরে আবাদ করা। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৫০ হেক্টরে, উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।
চাষিদের অভিজ্ঞতা
শরিফুল ইসলাম নামের এক চাষি বলেন, “এ বছর প্রায় ৭০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি, যার মধ্যে ৪০০ মণ বিক্রি করেছি। আজ ৩২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এক বিঘায় ৪০–৫০ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু মৌসুমে দাম পাই না। যদি ৪–৫ হাজার টাকা মণ পাওয়া যায় তাহলে লাভ হয়। এখন ঘরে রাখা কিছু পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে, তবুও বেশি দামের আশায় ধরে রেখেছি।”
চাষি আনোয়ার হোসেনের আশা, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মণপ্রতি দাম ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে থাকুক। তার মতে, “সব কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও বিক্রির সময় ভালো দাম পাওয়া যায় না।”
আমজাদ হোসেন বলেন, “দাম কিছুটা বেশি, কিন্তু উৎপাদন কম ও পচনের কারণে লাভ তেমন হচ্ছে না। এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ে, অথচ একটু দাম বাড়লেই অনেকে গায়ে পড়ে কথা বলে। ন্যায্যমূল্য ছাড়া কৃষক বাঁচতে পারবে না।”
ব্যবসায়ীদের মন্তব্য
বিথি ট্রেডার্সের ইদ্রিস আলী বিশ্বাস জানান, “এলসি বন্ধ থাকায় কৃষকরা বাজারে পেঁয়াজ কম আনছে, তাই দাম বেড়েছে। গতবছর এই সময়ে দাম ছিল ৪৬০০–৪৮০০ টাকা মণপ্রতি। এ সময় কৃষকেরা পাট বিক্রি করায় পেঁয়াজ বাজারে কম আসছে।”
মন্ডল ট্রেডার্সের কামরুজ্জামান সুইট বলেন, “এখন কৃষকেরা মণপ্রতি ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন, যা তাদের জন্য ভালো দাম। প্রতিহাটে ৪০–৫০ গাড়ি পেঁয়াজ আসে এবং পরে তা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।