জুমবাংলা ডেস্ক : অনলাইন জুয়ায় নেশাগ্রস্ত হয়ে অনেকেই সর্বসান্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। কিশোর বয়সেই অনেকে হয়েছে বিত্ত-বৈভবের মালিক। সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের বোনের নাম আসায় ফের আলোচনায় এসেছে অনলাইন জুয়ার বিষয়টি। অনেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই পথ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ভেতরে ভেতরে চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও নেমেছেন এই পথে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কেউ কেউ নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছেন বিদেশেও। আবার বিদেশে বসে পরিচালনা করছেন দেশের অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো।
বছর দুয়েক আগেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডের একটি সেলুনে কাজ করতেন সাগর বৈদ্য। এখন একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বণিক সমিতি। এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। বসবাস করেন বিলাসবহুল বাড়িতে। সাগরের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে তার অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। এই কারণে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন, তবুও থামেনি তার জুয়ার প্ল্যাটফরম। সেলুন থেকেই শুরু করেন অনলাইনে জুয়া খেলা। কয়েক দিন যেতে না যেতেই হয়ে ওঠেন কোটিপতি। অর্থ-সম্পত্তি বেড়ে যাওয়ায় বাড়তে থাকে সাগরের ব্যবসাও। শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারে ফার্ম ফ্রেশ মিট জোন, সাঘরদীঘি রোডে সুমনা পোলট্রি হাউজ নামে খাদ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। এছাড়া তিনি গড়ে তুলেছেন আশার আলো শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতি, যার মাধ্যমে শুরু হয় তার দাদন ব্যবসা। সেটি এখন একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।
কোনো আয় রোজগার ছিল না তাদের। বেকার হিসেবে এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। হঠাৎ দেড় বছরের মধ্যে তারা হয়ে যান কোটিপতি। কেনেন ২ কোটি টাকার জমি ও প্রাইভেট কার। তরিকুল ইসলাম বাবু (২৮) ও রানা হামিদের (২৬) নামে দুই যুবকের জীবনের চিত্র পালটে যায় অনলাইন জুয়ায়। মেহেরপুরের এই দুই তরুণ মাত্র দেড় বছরে জুয়ার টাকায় কিনেছেন ২ কোটি টাকার জমি ও প্রাইভেট কার। আরও জমানো নগদ টাকাতো আছেই। শুধু তাই নয়, জুয়ার ২৫-৩০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। রানা ও বাবু মূলত ভারত, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পার্টির মাধ্যমে দেশে বসে লিংকের মাধ্যমে এসব অনলাইন জুয়ার আসর চালাত। উত্তরায় বসে এসব কাজ চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমন তথ্য দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তারা কারেন্সি কেনে ৬০ টাকা দিয়ে। আর তা বিক্রি করতেন ১৫০ টাকায়। তারা একসময় খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিয়েছিল পরে মাস্টার এজেন্ট হিসেবে গত দেড় বছর ধরে এই ব্যবসা চালাচ্ছিল। তারা ২০ থেকে ২৫টি বিভিন্ন ব্যাংক বিকাশ রকেট এজেন্ট এবং ১০ থেকে ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা পাচার করেছে। তবে তাদের কাজে সহায়তা করত সুমন। এই সুমনের কাজ ছিল জুয়ার টাকাগুলো বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের পাঠানো। এজন্য তারা বিকাশ, রকেট ছাড়াও ই-ব্যাংকিং সেবার সহায়তা নিত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা গ্রেফতার হয়।
ইউক্রেনের ওয়েবসাইট বাইনানি ডটকম, বাইনানি টুয়েন্টিফোর ডটকম, বাইনানি, প্রোফি আইকিউ, বাইনানি গো অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়ার আসর শুরু করে মাত্র পাঁচ মাসেই কোটিপতি হয়েছে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কলেজছাত্র সাখাওয়াত হোসেন শাওন। চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী আবাসিকের পারটেক্স ভবনে ৬৫ লাখ টাকায় কিনেছে ফ্ল্যাট। ৩৩ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। যেটি এখন জব্দ পুলিশের হাতে। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে শাওন। পুলিশ কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না, এত অল্প সময়ে অনলাইন জুয়া খেলে কোটিপতি হওয়া, গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া কি করে সম্ভব!
সাইফুল ইসলাম অভি, বয়স মাত্র ২৮ বছর। এর মধ্যেই জীবনে পরিবর্তন এসেছে তার। সব কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। একেবারে মোবাইল মেকানিক থেকে এখন কোটি-কোটি টাকার মালিক সে। শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিকই হননি, সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের পদ-পদবিও বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতা ও টাকার জোরে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল বাহিনী। স্থানীয় বাজারের আল মদিনা টেলিকমে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয় তার কর্মজীবন। দেড় বছর আগে কোনো মাধ্যমে তিনি অনলাইনে বাজি ধরে জুয়া খেলার সন্ধান পান। ইন্ডিয়ান মালিকাধীন সেটস্টেট সাইডের এডমিন ও ভেলকি সাইডের সুপার এজেন্ট সাইফুল ইসলাম অভি। এভাবেই হঠাত্ করে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সাইফুল ইসলাম অভি। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছ সঞ্চয়পত্র। মাত্র বেশ কিছুদিন আগেও হবিগঞ্জ শহরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার জমি কিনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলে সাব্বির মিয়া (২৯) নামের এক যুবক হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। একপর্যায়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন। জানা যায়, ছোট একটি কনফেকশনারির দোকান থেকে মো. সাব্বির মিয়া শুধু অনলাইন জুয়া খেলে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তিনি জুয়া খেলেন। জেলা শহরের পিরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে সাব্বিরের দুটি বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাটসহ সাতটি বাড়ি রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।