আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বের চাহিদা অনুসারে মাত্র ১০ সপ্তাহের গম মজুদ আছে। ব্যাপক সারের ঘাটতি, সরবরাহ-শৃঙ্খলের সমস্যা, রেকর্ড খরা ছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে।
আরটি গ্রো ইন্টেলিজেন্সের সিইও সারা মেনকার বলছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর থেকে এতটা দেখা যায়নি। তার মতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণ নয় বরং দীর্ঘদিন ধরে খরার পাশাপাশি জ্বালানি সংকট আরো জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া সংকট শীঘ্রই দূর হবে না। আক্রমনাত্মক বৈশ্বিক ক্রিয়াকলাপ ছাড়াও আমরা অস্বাভাবিক পরিমাণে মানবিক দুর্ভোগ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকিতে আছি।
গত দুই মাসে গমের দাম রেকর্ড উচ্চতায় বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে শস্য সংকট অনুভূত হচ্ছে। রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং ভারতের মতো প্রধান উৎপাদকরা তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষার জন্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, যখন চলমান সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের সরবরাহ বিপদে পড়েছে। এটি বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষুধার আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে এর আগে বলেছিলেন যে ৪৩টি দেশের ৪৯ মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যেই ‘দুর্ভিক্ষের দরজায় কড়া নাড়ছে।
এদিকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বলেন, ভারতের গম রপ্তানি বিশ্ববাণিজ্যের ১ শতাংশের কম। আমাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববাজারকে প্রভাবিত করবে না। আমরা দুর্বল দেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোয় গম রপ্তানি অব্যাহত রাখব।
পীযূষ গোয়েলের বক্তব্যের আলোকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লিতে একটি বিবৃতি ইস্যু করেছে। বিবৃতি অনুযায়ী, পীযূষ গোয়েল বলেছেন, গুরুতর প্রয়োজন রয়েছে এমন দেশগুলোর পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ ও ক্রেডিট লেটার থাকা দেশগুলোয় গম রপ্তানির অনুমতি অব্যাহত রাখবে ভারত।
পীযূষ গোয়েল বলেন, চলতি বছর গম উৎপাদন ৭ থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তীব্র দাবদাহের কারণে ফসল আগাম কাটতে হয়। এতে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা যা উৎপাদন করছি, তা অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য যথেষ্ট। পীযূষ গোয়েল আরও বলেন, আন্তর্জাতিক গমের বাজারে ভারত কখনোই নিয়ন্ত্রক ছিল না। দুই বছর আগে ভারত গম রপ্তানি শুরু করে। ভারত গত বছর ৭ এলএমটি গম রপ্তানি করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে গত দুই মাসে বেশির ভাগ গম রপ্তানি করা হয়েছে।্রৃ
গত ১৪ মে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। সেদিন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে রপ্তানিতে ধস নামায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছিল বৈশ্বিক ক্রেতারা।
তীব্র দাবদাহের কারণে ভারতে এবার গমের উৎপাদন কম হয়েছে। ব্যাপক রপ্তানি-চাহিদার মধ্যে স্থানীয় বাজারে গমের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গম রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
এছাড়া ইউক্রেনে রুশ হামলার জেরে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে গম রপ্তানিতে ধস নামে। এ কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী দেশে ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছিল বৈশ্বিক ক্রেতারা। ভারতের রপ্তানি-নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক বাজারে গমের দাম আরও বাড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।