আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়াম ‘বন্দি’ মহাকাশে। এখনও তার পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মিশনের মেয়াদ ফুরনোর পরেও সুনীতা ও তার সঙ্গী বুচ উইলমোর আটকে রয়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। তাদের মহাকাশযান বোয়িং স্টারলাইনারকে ঘিরেই ঘনিয়েছে বিতর্ক। ৫৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীতে কবে ফিরবেন তারা তা এখনও অনিশ্চিত। তাই খানিকটা উদ্বেগেই রয়েছে মহাকাশচারী মহল।
উদ্বেগের কারণও রয়েছে যথেষ্ট। কারণ স্টারলাইনার ক্যাপস্যুলে সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছিল নাসা। তারপর শেষ হয়ে যায় ব্যাটারি। হিসাব মতো নাসার হাতে দিন সংখ্যা ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে। এই আবহে খানিক হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে বিজ্ঞানী মহলের একাংশ। কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বলছেন আগামী ১৯ দিনের মধ্যয়েই নাকি অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। কারণ এই ১৯ দিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে যেন তেন প্রকারেণ সুনীতাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে পৃথিবীতে। কোন অঙ্কে এই ‘ডেডলাইন’?
খুব শীঘ্রই নাসার তরফে ক্রু-৯ মিশন শুরু হতে চলেছে। ১৮ অগাস্টের পর এই মিশন শুরু হওয়ার কথা। এই মিশনে স্পেস এক্স-এর মহাকাশযানে অন্য কয়েকজন নভোশ্চরকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠাবে নাসা। তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসার নভোশ্চর জেনা কার্ডম্যান, নিক হ্যাগিউ, স্টিফেনি উইলসন, আলেকজান্ডার গরবুনভ। এদিকে বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই নোঙর করা রয়েছে স্টারলাইনার মহাকাশযানটি। নয়া মিশনের জন্য স্পেস এক্সের দৈত্যাকার মহাকাশযানটিকে সেখানে নোঙর করতে হলে অবিলম্বে স্টারলাইনারকে সরাতে হবে। যদি কোনও ভাবে স্টারলাইনারকে সরানো না যায় তবে বিকল্প পথ বেছে প্রয়োজনের স্পেস এক্স ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে সুনীতা ও বুচকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতেই হবে। ১৯ দিনের মধ্যয়েই পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন সুনীতারা? অপেক্ষার প্রহর গুণছে বিশ্ববাসী।
এখনও পর্যন্ত দুই মহাকাশচারীর ফেরার তারিখ ঘোষণা করতে প্রস্তুত নয় নাসা। মহাকাশযান বোয়িং স্টারলাইনারের যে ত্রুটিগুলি ছিল তা সারানোর চেষ্টা করছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ত্রুটি সম্পূর্ণ ভাবে মেরামতি হলে তবেই পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন সুনীতারা। ১৩ জুন থেকে মহাকাশ স্পেস স্টেশনে নোঙর করা রয়েছে তাদের মহাকাশযানটিকে। মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। গত ৭ জুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। উৎক্ষেপণের পরেই একাধিক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল তাঁদের মহাকাশযানে। সেইসব ত্রুটি নিজেরাই মেরামত করেছিলেন নভোশ্চররা।
যাবতীয় সমস্যা পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায় মহাকাশযান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ জমা হয় স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে। ইতিমধ্যেই বোয়িং স্টারলাইনারের যান্ত্রিক সমস্যা মেরামতিতে ২৭টি থ্রাস্টারে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। স্টারলাইনার স্পেসক্র্যাফ্টে হিলিয়াম লিক করছে বলে ইঞ্জিনিয়াররা জানান। স্টারলাইনারের এই সমস্যাগুলি সুনীতা-বুচের পৃথিবীতে ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত স্টারলাইনারের যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতিতে কাজ করছে নাসা।
এই আবহে, মহাকাশে দীর্ঘদিন ধরে মহাকাশচারীরা আটকে থাকায় তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, নির্ধারিত সময়ের বেশি দিন মহাকাশে থাকার দরুন সুনীতা ও বুচের হাড়ের ক্ষয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মহাকাশে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর বিকিরণের সংস্পর্শে আসেন মহাকাশচারীরা। ফলে দীর্ঘদিন পর পৃথিবীতে ফিরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। প্রায়শই জ্ঞান হারান, মাথা ঘোরে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি শূন্য জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার ফলে হাড়গুলির কর্মক্ষমতাও হারায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পেশিও। মেরুদণ্ড ও তলপেটের হাড়ও ক্ষয় হয়। শরীরে তরলের বণ্টন ঘেঁটে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেচন প্রক্রিয়া, কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, হরমোনের মাত্রার ওঠাপড়া উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।