সিপন আহমেদ : সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, যাকে ইংরেজিতে বলে বেসিক ট্রেনিং। সাধারণত সাংবাদিকতার শুরুর দিকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ সাংবাদিকতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা আর কী? রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু ইলিমেন্টস লাগে, সেগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা বলা যায়। যেমন- কোন একটা ঘটনাকে সংবাদ হিসেবে উপস্থাপন করতে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পাঠাককে জানাতে হয়। অর্থাৎ ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, কখন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, কোন হতাহত আছে কীনা, ক্ষয়ক্ষতি আছে কীনা, থাকলে কি পরিমাণ ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ- পিআইবি সরকারি টাকা খরচ করে এধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। পিআইবির অফিসসহ জেলা পর্যায়েও এ ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য সাংবাদিকদের আমি চিনি ও জানি, যারা দুই দশক, তিন দশক ধরে সাংবাদিকতা করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করায় তাদের সাংবাদিকতা জীবন অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তবুও কেন তারা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নেন, তা বোধগম্য নয়। হতে পারে তাদের অনেকে সাংবাদিকতার বেসিক সম্পর্কে অবগত নয়, অথবা প্রশিক্ষণে অংশ নিলে একটা সম্মানি পাবে এজন্য তারা অংশ নেয়।
আবার পিআইবি আয়োজিত এসব প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকেন জেলা প্রশাসক। যিনি নিজেকে এতোটাই পণ্ডিত মনে করেন যে, সুযোগ পেয়ে সাংবাদিকদের ঘুষ্ঠি উদ্ধার করেন। কোনটা সংবাদ আর কোনটা সংবাদ নয়, তা শিখিয়ে দেন। সাংবাদিকদের কী ধরনের সাংবাদিকতা করা উচিত, আর কী ধরনের সাংবাদিকতা করা উচিত নয়, তাও দেখিয়ে দেন চোখে আঙুল দিয়ে। শুধু জেলা প্রশাসক নয়, সরকারি প্রতিটি আমলাই মনে করেন, উন্নয়ন সাংবাদিকতাই একমাত্র সাংবাদিকতা। কাজেই তাদের অপকর্ম খোঁজার পরিবর্তে সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরাই সাংবাদিকদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। যারা তা করে না, তারা সব অপ-সাংবাদিক, হলুদ সাংবাদিক।
আমার এক বন্ধু হঠাৎ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে। অনেকে বলে জাল টাকা ছেপে ও এখন কোটিপতি। বন্ধুর নামে জাল টাকা ছাপানোর অভিযোগে মামলাও আছে। মাস দেড়-দুই আগে সে জামিন নিয়েছে। আজ বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু আমায় বলছে, তার সাংবাদিক লাগবে। এবং সেটা পারমানেন্ট। অর্থাৎ বন্ধু যেখানে যাবে, সাংবাদিকও সেখানে যাবে। সাংবাদিক সে কিনে নিবে।
আমি বললাম, বন্ধু তুমি শুধু নাম শুনেছো সাংবাদিক, কিন্তু সাংবাদিক কখনো দেখোনি হয়ত। তুমি টাকা দিয়ে সাংবাদিক পালতে চাইছো, কিনে নিতে চাইছো, কিন্তু সাংবাদিক যদি রিপোর্ট করে তুমি যে এতো টাকার মালিক, এ টাকার উৎস কী? তাহলে তো তোমার আম-ছালা দুই-ই হারাবে।
আজকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও দেখলাম সাংবাদিকতা নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে। কে সাংবাদিক আর কে সাংবাদিক নয়, সেটা উনি বাতলে দিচ্ছেন। পুলিশ সুপারকে শুধু এতোটুকু বলবো, আপনার পছন্দ মতো যারা সাংবাদিকতা করে, তারা সাংবাদিক নয়, তারা দালাল। আর যারা আপনার পছন্দের নয়, মনে করবেন তারাই প্রকৃত সাংবাদিক। তাদের দ্বারাই এ দেশের, রাষ্ট্রের, মানুষের, সমাজের কিঞ্চিৎ হলেও উপকার হয়।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।