জুমবাংলা ডেস্ক : পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটানোয় নিজের শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ঘাতক মা ফাতেমা বেগম ও তার প্রেমিক মো. জাফরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ১২৪ নম্বর পিলার সংলগ্ন লেকে কাপড়ে মোড়ানো একটি ব্যাগ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন রাতে কন্যাশিশুকে হত্যার পর মরদেহ সেখানে ফেলা রাখা হয়েছিল।
শনিবার দুপুরে পল্লবী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
পুলিশ বলছে, ওই শিশুর মায়ের সঙ্গে বাবার দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। তিনি গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। এক-দুই সপ্তাহ পরপর পল্লবীর বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে মেয়ের খোঁজ করতে থাকেন।
পরে স্ত্রী ফাতেমা তাকে জানায়, মেয়েকে গলাটিকে হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার এই কাজে সহায়তা করেছে পরকীয়া প্রেমিক জাফর। বিষয়টি তাৎক্ষণিক তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘাতক দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী ফাতেমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তিনি জানতেন ফাতেমা পরকীয়ায় আসক্ত। দুই সপ্তাহ পরপর পল্লবীতে আসতেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। নিজের ছয় মাসের কন্যাশিশুকে হত্যার পর মরদেহ অন্যত্র ফেলে এসে নিজের স্বাভাবিক কার্যক্রম করছিলেন ফাতেমা।’
এদিকে মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিচয় জানতে বিভিন্ন থানাকে অবহিত এবং গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করে।
পুলিশ বাদী ওই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। ঘটনার সঙ্গে নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ফাতেমা। অন্যদিকে তার পরকীয়া প্রেমিক জাফর পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
যে কারণে এবং যেভাবে হত্যা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে জাফর গার্মেন্টসকর্মী ফাতেমার বাসায় আসেন। সেখানে তারা দুজন সম্পর্কে মিলিত হলে কন্যাশিশুটি কান্নাকাটি করছিল। এতে তারা দুজন বিরক্ত হন। মায়ের পরিকল্পনায় প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো হয়। পরে অচেতন হয়ে পড়লে শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর বিছানার চাদর দিয়ে মরদেহ মুড়িয়ে কাপড়ের একটি শপিং ব্যাগে ঢোকানো হয়। পরবর্তীতে প্রেমিক জাফর শপিং ব্যাগে মরদেহটি মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসেন।
পল্লবী থানা সূত্রে জানা যায়, ৬ ডিসেম্বর দুপুরে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ১২৪ নম্বর পিলার সংলগ্ন লেকপাড় থেকে ব্যাগবন্দি কাপড়ে মোড়ানো শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায়, শিশুটির গলায় আঘাতের চিহ্ন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে।
মামলাটি তদন্তে পুলিশ শিশুটির পরিচয় শনাক্তে কাজ শুরু করে। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটির নাম আমেনা। বয়স ৬ মাস। মা ফাতেমা বেগমের পরকীয়ার কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। ওই রাতেই জাফর ও ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজনেই বিবাহিত এবং একই (পল্লবী) এলাকায় থাকতেন।
যেভাবে গড়ে ওঠে পরকীয়া
জাফর যে গার্মেন্টসে কাজ করতেন, সেখানে ফাতেমা পূর্বে কাজ করতেন। সেসময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফাতেমার স্বামী গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। তাই কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। এই সুযোগে জাফর ও ফাতেমার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া চলছিল। তাদের মাঝে নিয়মিত সম্পর্ক হতো।
ঘটনার দিন জাফর সম্পর্কের জন্য আসেন। শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তাদের এই বিশেষ মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটে। তাই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মাত্র ৬ মাসের শিশুটিকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।