জুমবাংলা ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখন দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে নিয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তে শোনা যাচ্ছে না মিয়ানমারের অভ্যন্তরের গোলাগুলি কিংবা গোলার বিকট শব্দ। এ অবস্থায় সীমান্তে সতর্ক রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুরে নাফ নদীর জেটিঘাট থেকে দেখা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলী রয়েছে। এর মধ্যেও সতর্ক অবস্থায় জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা। আর নাফ নদীতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
টেকনাফের নাইট্যংপাড়া থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর জলসীমার পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে ককশিটের ভেলায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছে অন্তত ৫০ জনের বেশি জেলে। তবে কেউ জলসীমা পেরিয়ে মিয়ানমারের জলসীমার দিকে যাচ্ছেন না। খুবই সতর্ক অবস্থায় মাছ শিকার করছেন জেলেরা। কিন্তু ট্রলার নিয়ে বিজিবি টহল দল আসায় দ্রুত নাফ নদীর নাইট্যংপাড়া কূলে ফিরে যান তারা।
জেলে আব্দু রহিম (৬৫) বলেন, ‘শুনেছি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে। আর গত কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি ও গোলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তাই নাফ নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছিলাম। কিন্তু বিজিবি মাইকিং করে সতর্ক করায় কূলে ফিরে এসেছি। এখন সীমান্তে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত মনে হচ্ছে।’
আরেক জেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শুনা যাচ্ছে না। তবে তাদের তো বিশ্বাস করা যায় না; কখন আবার নাফ নদীতে নেমে ধরে নিয়ে যায় কিংবা গোলাগুলি শুরু করে।’
এ দিকে বেলা ১২টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আগুন জ্বলছে আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এই ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মাঝেও নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন। আর প্রতিটি ট্রলারে উঁচু করে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। আর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাসহ পণ্যবাহী সার্ভিস ট্রলারগুলো।
জেটিতে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন ফরিদ আলম (২৮)। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি কিংবা গোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মিয়ানমারের নলবুনিয়া এলাকায় একটি গ্রামে আগুন জ্বলছে আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।’
জেটি এলাকার দোকানদার বেলাল উদ্দিন (২২) বলেন, ‘কিছুদিন আগেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও গোলার বিকট শব্দে কাঁপতো টেকনাফের ঘরবাড়ি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না।’
এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় বিশেষ সতর্কতা হিসেবে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ও পণ্যবাহী ট্রলার।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘গত ৮ ডিসেম্বর পর দুদিন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, যেন কোনো বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় না যায়। এখনো তা বলবৎ রয়েছে। আর জোয়ারের সময় কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সার্ভিস ট্রলারগুলো চলাচল করছে।’
টেকনাফস্থ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, ‘সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত সড়কেও চলছে নানা তৎপরতা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।