ফিচারের তুলনায় দাম বেশি ‘অপো এফ২১ প্রো’র

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের বাজারে এফ সিরিজের নতুন একটা ফোন লঞ্চ করেছে চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপো। মডেল ‘অপো এফ২১ প্রো’।

নতুন ফোনটি বাজারে আসার পর থেকে ফোনটি নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন এবং আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে ফোনটির দাম ও তুলনামূলক ফিচারের অসামঞ্জস্যতার বিষয়টিতে নজর দিয়েছেন স্মার্টফোনপ্রেমীসহ সচেতন মহলের। বেশি কথা ওঠেছে ফোনটির দুর্বল প্রসেসর ব্যবহারের বিষয়ে।

তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক সচেতন মহলের মতামতের সাথে ফোনটিতে ব্যবহার করা ফিচারের মধ্যে কতটুকু মিল-অমিল রয়েছে।

সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা মূল্যের মিডরেঞ্জের ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। ‘অপো এফ২১ প্রো’ মডেলটির দাম ২৭ হাজার ৯৯০ টাকা। নতুন এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর।

অপো বলছে, নতুন ‘এফ২১ প্রো’ ফোনটিতে র‌্যাম বাড়ানো প্রযুক্তিসহ ৫জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র‌্যাম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে। মানে এতে ৫ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করা যাবে। প্রশ্ন ওঠেছে, ভার্চুয়াল র‌্যাম আসলে কতটা কাজের?

স্মাটফোন বিশেষজ্ঞরা বলছে, ভার্চুয়াল র‍্যাম মূলত ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ স্মুথভাবে রান করতে সহায়তা করে থাকে। এটি নতুন কোন প্রযুক্তি না। এইটা স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের অনেক পুরাতন একটি ফিচার। স্টোরেজ যতবেশি ফাস্টই হোক না কেন, তা কখনোই ফিজিক্যাল র‍্যামের মত পারফমেন্স দিতে পারবে না। ফোনের ভার্চুয়াল র‍্যামকে কখনোই ফিজিক্যাল র‍্যামের মতো ব্যবহার করতে পারবে না। ফোনের ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।

এছাড়া ভার্চুয়াল র‍্যামের ক্ষতিকর দিক আছে। কেননা অ্যান্ড্রোয়েড ফোনের যেই স্টোরেজ আছে সেগুলোর লিমিটেড লাইফস্প্যান থাকে। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট রাইট/রিরাইট করার হার থাকে। ফলে দেখা গেছে, এক্সটেন্ডেড ভার্চুয়াল র‍্যাম কাজে না আসলেও বেশি ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত সোয়াপিং এবং রাইট/রিরাইটের মাধ্যমে ফোনের স্টোরেজ লাইফস্প্যান কমিয়ে দেয়।

দেশের শীর্ষ এক মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বলেন, ভার্চুয়াল র‍্যাম কিভাবে কাজ করে তা আমার জানা নেই। এমনকি ভার্চুয়াল র‍্যামের ফোন কিনতে আমরা কাউকে উৎসাহিতও করি না।

অপো বলছে, ‘এই ফোনটিতে যুগান্তকারী ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। ’অথচ ২৭ হাজার ৯৯০ টাকার নতুন মডেলের ফোনে নেই ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা। যেখানে আজকাল ১৫-১৬ হাজার টাকার ফোনেও রয়েছে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা।

কমদামের ফোনে ৪-কে ভিডিও করা গেলেও ‘অপো এফ ২১ প্রো’তে ৪-কে ভিডিও করা যায় না। এতে শুধু রয়েছে এইচডি ভিডিও করার প্রযুক্তি। কেননা এতে ব্যবহার করা হয়েছে দুর্বল প্রসেসর।

নতুন প্রযুক্তির ১৪-১৫ হাজার টাকার ফোনে ডুয়েল স্পিকার দেয়া হলেও ‘অপো এফ২১ প্রোতে’ দেয়া হয়েছে সিঙ্গেল স্পিকার।

স্মার্টফোন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাবজি বা ফ্রি-ফায়ারের মত গেম যারা খেলেন, তারা এই ফোন কিনলে ভালো রেজুলেশন না পেয়ে হোঁচট খাবেন। ফোনের গেমিং পারফর্মেন্সে হতাশ হতে না চাইলে এই ফোন না কেনাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

অপো আরো জানিয়েছে, উদ্ভাবন ও নান্দনিকতার মিশেলে মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার প্রত্যয়ে অপো-এর এফ সিরিজের নতুন ফোন ‘অপো এফ২১ প্রো’ উন্মোচন করেছে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্টফোনটি দেশের বাজারে লঞ্চ করেছে চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে দেখা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে উন্মোচিত হওয়া অপো ‘রেনো ৭ সিরিজে’র ফোনের সাথে খুব বেশি পার্থক্য নেই ‘অপো এফ২১ প্রো’র। ‘রেনো ৭ প্রো’তেও ব্যবহার করা হয়েছে সনির আইএমএক্স৭০৯ সেলফি সেন্সর। পাশাপাশি ডিজাইন ও রঙে মিল রাখা হয়েছে দুটি ফোনের।

অনেকেই মনে করছেন, গত বছর বিশ্ববাজারে উন্মোচিত হওয়া ‘রেনো ৭ প্রো’ মডেলের ফোনটিই ৬ মাস পর ‘অপো এফ২১ প্রো’ নামে বাংলাদেশের বাজারে এসেছে।

সচেতন মহল কেনো এমনটা মনে করছেন। ফোন দুটির মধ্যে এমন কী মিল রয়েছে? মিলগুলি এখন দেখে নেয়া যাক।

ডিসপ্লে : অপো রেনো ৭ প্রোতে ৬.৫৫ ইঞ্জির অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যার রেজুলেশন ১০৮০×২৪০০ পিক্সেল। ডিসপ্লের সুরক্ষায় থাকছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫। অপো এফ২১ প্রোতে ৬.৪৩ ইঞ্জির অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যার রেজুলেশন ১০৮০×২৪০০ পিক্সেল। ডিসপ্লের সুরক্ষায় রেনোর মতোই ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫।

ক্যামেরা: রেনো ৭ প্রোতে ব্যাক ক্যামেরায় থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। ফ্রন্টে সেলফির জন্য ৩২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম সনি আইএমএক্স ৭০৯ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। অপো এফ২১ প্রোতে পিছনে ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ফ্রন্টে সেলফির জন্য রেনোর মতোই ৩২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেয়া হয়েছে। প্রিমিয়াম সনি আইএমএক্স ৭০৯ প্রযুক্তি রোনোতে যেমন, এখানেও তেমন থাকছে।

ব্যাটারি: লি-পো ৪৫০০ এমএএইচ ব্যাটারির রেনো ৭ প্রোতে থাকছে ৬৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি। যার ফলে ফোনটি ৩১ মিনিটেই ফুল চার্জ হবে। অপো এফ২১ প্রোতেও লি-পো ৪৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফোনে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ৩৩ ওয়াটের। যার ফলে ফোনটি চার্জ হতে সময় লাগবে।

স্টোরেজ : দুই ভ্যারিয়েন্টে রেনো সিরিজের ফোনটি বাজারে এনেছে অপো ৮ জিবি র‍্যাম ও ২৫৬ জিবি রম এবং ১২ জিবি র‍্যাম ও ২৫৬ জিবি রম। ২ ভেরিয়েন্টেই এফ২১ প্রোতে কমিয়ে দেয়া হয়েছে র‍্যাম ও রম। ৬ জিবি র‍্যাম ও ১২৮ জিবি রম এবং ৮ জিবি র‍্যাম ও ২৫৬ জিবি রমে এসেছে ফোনটি।

পারফরম্যান্সের দিক থেকে অপো ‘রেনো ৭ প্রো’তে ফোনটি অক্টাকোর মিডিয়াটেক ডাউমেনসিটি ১২০০ ম্যাক্স প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ‘অপো এফ২১ প্রো’তে অক্টাকোর স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে।

গুগল ড্রাইভে সহজেই ছবি রাখার নিয়ম