বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। নাটোরের লালপুরে মোবাইলে পাবজি গেম খেলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে ফারুক হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়। পরের বছর ২০২১ সালের ৮ জুন বগুড়ার শেরপুরে পাবজি গেমস আসক্তির বলি হয় রকি হোসেন। পাবজি গেমস নিয়ে এমন অসংখ্য ঘটনা গত কয়েক বছর ধরে দেশ এবং দেশের বাইরে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্ট বাংলাদেশে সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ ক্ষতিকর সব অনলাইন গেমস তিন মাস বন্ধ থাকার নির্দেশ দেন।
সেই সময় ফ্রি-ফায়ার গেমসের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে এসব গেমসকে যুব সমাজের সহিংসতা প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। সবশেষ চলতি বছরের ২০ এপ্রিল দেশে পাবজি গেমস বন্ধের নির্দেশনা বহাল রাখে হাইকোর্ট। এমন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপো ক্ষতিকারক এই গেমসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব গেমস খেলতে উদ্বুদ্ধ করছে দেশের তরুণ সমাজকে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের সবশেষ উন্মোচিত হ্যান্ডসেট এফ২১ প্রো মডেলের হ্যান্ডসেটটির কাটতি বাড়াতে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে পাবজিসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক গেমসকে। অনুসন্ধানে এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই প্রচারণার প্লাটফর্ম হিসেবে নিজেদের ওয়েবসাইটকে বেছে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অপো তাদের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে জানিয়েছে- (AI Frame Rate Stabilizer is only available on LOLM, Mobile Legend, Free Fire, PUBG, Subway Surfers, Call of Duty: Mobile, and Genshin Impact.) অর্থাৎ, ‘পাবজি, এলওএলএম, মোবাইল লিজেন্ড, ফ্রি ফায়ারসহ শুধু ৭টি গেমসের জন্য অপো এফ২১ মডেলের হ্যান্ডসেটটিতে রয়েছে এইআই ফ্রেম রেট স্টাবলাইজার’।
অভিযোগ উঠেছে, এমন তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাবজি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক গেমসের নাম পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোন মোবাইল এই খেলার জন্য উপযুক্ত সেই তথ্য জানাচ্ছে।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট ওই মডেলের হ্যান্ডসেটের বিক্রি বাড়াতে জানিয়েছে, তাদের এই হ্যান্ডসেটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে গেম ফোকাস মুড। এর ফলে টানা গেম খেলতে পারবেন হ্যান্ডসেটটি ব্যবহারকারীরা।
আইন কী বলছে?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৩১ নং (১) ক্রমিক অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এ বিষয়ে জানতে ২১ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অপোর সঙ্গে ই-মেইল ও মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সংবাদ প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত (২৩ এপ্রিল সকাল দুপুর পর্যন্ত) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।