জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। চার বছর পর আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রথমবারের মতো ব্যক্তিপর্যায়ের পাশাপাশি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবে। তাও আবার ১৫ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করলেই বৈধতা নেওয়া যাবে।
অর্থাৎ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে কোনো প্ল্যাটফর্মে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে। বিগত দিনে কালো টাকা সাদার করার যত সুযোগ দেওয়া হয়, তা মূলত ব্যক্তি হিসেবে সুযোগ গ্রহণ করতে পারত বলে জানা গেছে।
পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক ২০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরেও ৯৮ শতাংশ করদাতা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন।
৪ বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় আগামী অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার করার সুযোগ। এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে যে কেউ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পাবে, আগামী বাজেটে এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাবনা থাকছে। অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমাসহ এ সুযোগ দেওয়ার ফলে অর্থের বিষয়ে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না।
অন্যদিকে, বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর।
বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী, যে কোনো করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে এর সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিতে পারে।
তবে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যে কোনো সংস্থা চাইলে পরবর্তী সময়ে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কালো টাকা সাদা করার সময় বা এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে কেউ যেন অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলতে পারে, এ জন্য ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে এনবিআর।
২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়। যেখানে ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা বৈধ করেছেন। যা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন।
এনবিআর সূত্র বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৮৫৯ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই এক হাজার ৪৫৫ ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করেছেন ৬১৯ কোটি টাকা।
কালো টাকা বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যক্তি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করেছেন। তারা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আইনগতভাবে বৈধ করেছেন।
আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (এ) ধারায় অপ্রদর্শিত অর্থ সরাসরি ঘোষণা নিয়ে বৈধ করেছেন ২ হাজার ২৫১ জন করদাতা। যার পরিমাণ হলো ১ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি করদাতা সরাসরি কর দিয়ে বৈধ করেছেন।
ওই সময়ে বিদেশে যে কোনোভাবে আয় করা অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধভাবে দেশে আনা যাবে। মাত্র ৭ শতাংশ কর দিলেই ওই অর্থ বৈধ হবে এবং আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে। যদিও বিদেশ থেকে কোনো অর্থ ওই সময়ে দেশে আসেনি। এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।