বিনোদন ডেস্ক : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের রুচি বদলে যাচ্ছে। এক সময়ের জনপ্রিয় ধারার অ্যাকশন সিনেমা এখন তাদের আকর্ষণ করে না। সম্প্রতি মাইকেল বের অ্যাম্বুলেন্স মুক্তির পর বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। পার্ল হারবার, ট্রান্সফরমারসের মতো জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমার নির্মাতা মাইকেল। তার অ্যাম্বুলেন্সও বেশ উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট। কিন্তু সিনেমাটির আয় হতাশাজনক। এর আগে কিয়ানু রিভস অভিনীত ম্যাট্রিক্সের এবারের পর্বটিও ফ্লপ করেছে। তাহলে প্রশ্ন আসে যে অ্যাকশন সিনেমার দিন কি শেষ? কিন্তু অন্যদিকে দেখা যায় যে ভিন্ন ধারার অ্যাকশন সিনেমা ঠিকই বক্স অফিস মাত করে। এখানে মূল বিষয়টি হলো অ্যাকশন সিনেমার দর্শক ঠিকই আছে, তবে তাদের রুচি বদলে গিয়েছে। বদলেছে অ্যাকশন সিনেমার ধরন। তাই কমেছে আয়।
মাইকেল বের অ্যাম্বুলেন্স উত্তর আমেরিকার ৩ হাজার ৪১২টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়ে প্রথম সপ্তাহে আয় করেছে ৮৭ লাখ ডলার। এটি বে পরিচালিত সর্বনিম্ন আয়ের সিনেমা। এর আগে ২০১৩ সালের পেইন অ্যান্ড গেইন প্রথম সপ্তাহে আয় করে ২ কোটি ডলার এবং ২০১৬ সালের বেনগাজি যুদ্ধ নিয়ে থার্টিন আওয়ারস প্রথম সপ্তাহে আয় করেছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অ্যাম্বুলেন্সের বিপরীতে থাকা জারেড লেটোর মরবিয়াস এবং দ্য লস্ট সিটি এর তুলনায় ভালো করেছে।
মাইকেল বে আসলে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত। কেননা ৯০-এর দশকে তার মতো জনপ্রিয় অ্যাকশন সিনেমা পরিচালক কমই ছিল। সমালোচকদের প্রশংসা সবসময় না পেলেও তার সিনেমা বক্স অফিসে তালিকার ওপরের দিকেই থাকত। এ সময়ে এসে সেটা আর হচ্ছে না। প্রথমত বে কিংবা অন্য পরিচালকদের সিনেমা এখন চাইলেই দর্শক নেটফ্লিক্সে দেখতে পারে। দ্য ওল্ড গার্ড, ট্রিপল ফ্রন্টিয়ার, সিক্স আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো সিনেমা এখন আর কেউ থিয়েটারে গিয়ে দেখে না। নেটফ্লিক্সেই সব দেখার সুযোগ রয়েছে। সেখানেও বের সিক্স আন্ডারগ্রাউন্ড পিছিয়ে থাকছে। এর কারণ হিসেবে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিনেমা ও সিরিজের কথা বলা হচ্ছে।
একটা সময়ে সিটকম জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এ সিরিজগুলোর দর্শক ছিল টেলিভিশনকেন্দ্রিক। রোমান্টিক কমেডি ঘরানার সিনেমাকে মধ্যম মানের বলে মনে করা হতো। গত কয়েক বছরে নেটফ্লিক্সের অরিজিনাল রম-কম সিনেমা ও সিরিজ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। দেশভিত্তিক আলাদা আলাদা সিরিজও তৈরি হয়েছে। এসবের জনপ্রিয়তার কারণে পেছনে পড়ে গিয়েছে অরিজিনাল অ্যাকশন সিনেমা। কমস্কোরের একজন জ্যেষ্ঠ মিডিয়া অ্যানালিস্ট বলেন, ‘একটা সময় বড় বাজেটের অ্যাকশন সিনেমা হতো, কিন্তু এ ধরনের সিনেমা কেবল থিয়েটারের উপযুক্ত। তারাই ওই বাজেটের সিনেমা থেকে মুনাফা আনতে পারে।’
এখন অ্যাকশন সিনেমা হচ্ছে না এমন নয়। তবে সেখানে ম্যাট্রিক্স, অ্যারমাগেডন, ব্যাড বয়েজের মতো সিনেমার সংখ্যা কমে গিয়েছে। এখন অ্যাকশন সিনেমার জায়গা নিয়ে নিয়েছে মারভেলের সুপারহিরো সিনেমাগুলো। ফলে হলিউডের সনাতন ধারার অ্যাকশন সিনেমার জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। ব্যবসা কমার কারণে প্রযোজকরাও এ ধরনের সিনেমায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজ এন্টারটেইনমেন্ট রিসার্চের প্রধান ডেভিড গ্রস বলেন, ‘দর্শক প্রতিদিনই নতুন কিছু চান। মানের ক্ষেত্রে তাই আগের মতো থাকা চলে না।’
শুধু নেটফ্লিক্স বা স্ট্রিমিং মিডিয়ার কারণে হলিউডের অরিজিনাল অ্যাকশন সিনেমার বাজার কমে গিয়েছে, এমন মনে করা ঠিক হবে না। দর্শকের রুচি পরিবর্তন হয়েছে। রুচি পরিবর্তনে নেটফ্লিক্সের রম-কম যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি ভূমিকা আছে মারভেল বা ডিসির মতো প্রতিষ্ঠানের। স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম এবং দ্য ব্যাটম্যানের সাফল্য এ কথাই প্রমাণ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।