জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে স্বর্ণের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। বাজারে অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক অস্থিরতার সময় ব্যবসায়ীদের কাছে স্বর্ণ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এই দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।
Table of Contents
স্বর্ণ কেন জনপ্রিয় নিরাপদ বিনিয়োগ?
২২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক সংকট বা অস্থির সময়ে প্রথাগতভাবে স্বর্ণকে একটি নির্ভরযোগ্য ও দৃশ্যমান সম্পদ হিসেবে দেখা হয়।
বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ছিল উল্লেখযোগ্য। এর প্রতিক্রিয়ায় স্বর্ণের দাম বেড়ে ৩,১৬৭ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্ক নিয়ে উদ্বেগের কারণে স্বর্ণের দাম বছরের পর বছর রেকর্ড ভেঙে চলেছে। সাধারণত অর্থবাজারে ধস নামলে অনেকেই স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকেন, যার ফলে হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি পায়।
তাহলে কারা স্বর্ণ কিনছে?
বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ড. ফিলিপ ফ্লায়ার্স জানান, সরকার, ব্যক্তিগত ও খুচরো বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ারবাজার থেকে সরে এসে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন। এর ফলে স্বর্ণের দাম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধাতু’ হিসেবে স্বর্ণ
স্বর্ণকে বহুদিন ধরেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধাতু হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময়েও স্বর্ণের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আর্থিক বাজারের পরিবর্তনের প্রভাব স্বর্ণের ওপরও পড়ে। যেমন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্বর্ণের দাম বাড়লেও মার্চ মাস নাগাদ তা আবার কমে যায়।
ড. ফ্লায়ার্স বলেন, “এটি নিরাপদ বিনিয়োগ হলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়।”
স্বর্ণের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য
স্বর্ণ শুধু মূল্যের দিক থেকেই নয়, বরং এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কারণেও একে বিশ্বব্যাপী মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীন মিশরের তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ, ঘানার আসান্তে জাতির গোল্ডেন স্টুল, এবং ভারতের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সোনার সিংহাসন—এসবই স্বর্ণের ধর্মীয় ও প্রতীকী গুরুত্বের উদাহরণ।
এজন্য অনেকেই তাদের সম্পদ রক্ষায় স্বর্ণকে একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কতটুকু?
বাসায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার বা গয়নার দাম বিশ্ববাজারের ওঠানামায় তেমন প্রভাবিত হয় না। তবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করলে তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ড. ফ্লায়ার্স সন্দেহ করছেন, সাম্প্রতিক স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক সোনা কেনাই অন্যতম কারণ। তারা শেয়ারবাজার থেকে সরিয়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে রিজার্ভ শক্তিশালী করছে।
দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন
ড. ফ্লায়ার্সের মতে, “স্বর্ণের দাম বাড়বে এই আশায় বিনিয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। বাজার স্থিতিশীল হলে এবং সরকারগুলো স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরলে মানুষ আবার স্বর্ণ বিক্রি করতে শুরু করবে। তাই স্বর্ণে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে করাই উত্তম।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।