ধর্ম ডেস্ক : সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত খাবার-পানীয় ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম- রোজা। মুসলিমরা ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষ রোজা রাখে বিভিন্ন নামে।
ইহুদিদের রোজা
মুসলমানগণ ছাড়াও ইহুদি ধর্মের লোকেরাও অনেক বেশি রোজা রেখে থাকে। তাদের উপর যদিও শুধু আশুরার রোজাটি রাখা ফরজ তথাপি তারা এই দিন ছাড়াও অন্যান্য দিনেও অনেক রোজা রেখে থাকে।
আশুরার দিনের রোজাটিকে তারা কাফফারার রোজা বলে থাকতো। এই দিনে তারা নিজেদের উপাসনালয়ে তওবা কান্নাকাটি ও তাওরাত কিতাব তিলাওয়াত করে কাটাতো। তাওরাতের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাদের উপর রজব মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখা আবশ্যক ছিলো। এই দিনে কেউ রোজা না রাখলে তার জন্য নিজের জাতি থেকে আলাদা হয়ে যেতে হতো।
খ্রিষ্টানদের রোজা
খ্রিষ্টানরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী। ইহুদিদের মতো নাসারাদের মধ্যেও রোজা রাখার বিষয়টি পাওয়া যায়। তাদের আসমানি কিতাব ইঞ্জিল এর ভাষ্যমতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ৪০ দিন ৪০ রাত রোজা রেখেছিলেন। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের একান্ত অনুসারী হাওয়ারিনদেরকেও রোজা রাখার আদেশ করেছিলেন।
রোমান ক্যাথলিকদের রোজা
এটি নাসারাদের একটি বড় দলের নাম। রোমান ক্যাথলিক দলটি প্রতি সপ্তাহে বুধবার ও শুক্রবারে রোজা রেখে থাকে। তবে তাদের রোজার ভিন্নতা হলো, তারা রোজার দিনেও পানি পান করতে পারে। তাদের ভাষ্যমতে পানি যেহেতু তরল পদার্থ সুতরাং এটি খাদ্য জাতীয় বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়; যা খেলে রোজা ভেঙে যেতে পারে। তাদের অভিমত হলো, রোজা হলো একটি ইবাদত।
ইবাদতে আনন্দ ও উৎফুল্লতা থাকতে হবে। সুতরাং পানি ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেরেশান ও অস্থির হওয়া যাবে না। যার কারণে তাদের মতে রোজার দিনে পানি পান করা যাবে।
হিন্দুধর্মের উপবাস
হিন্দু সনাতন ধর্মেও অনাহার, উপবাস থাকার প্রথা চালু আছে। যদিও শরিয়তে তাদের এসব প্রথাকে স্বীকৃতি দেয়নি। হিন্দুদের মধ্যে উপোস থাকার ব্যাপক যে প্রথাটি চালু আছে সেটির নাম তারা ورت দিয়েছে।
এটি তাদের মধ্যে কীভাবে কখন কোথায় থেকে চালু হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু হিন্দুরা তাদের সামাজিকতা ও পূর্ব থেকে চলে আসা প্রথা অনুযায়ী এটি পালন করে থাকে।
হিন্দুরা প্রতি বাংলা মাসের ১১,১২ তারিখে অনাহারে কাটিয়ে থাকে। তাদের ভাষায় এটিকে একাদশী উপোস বলা হয়ে থাকে। এই হিসাবে প্রতি বছর তারা ২৪ টি উপবাস পালন করে থাকে। হিন্দুদের মধ্যে যোগী, সাধু তারা অনেক বেশি উপবাস পালন করেন। হিন্দুদের উপবাস পালনের সময় ফল, সবজি, দুধ, পানি ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
বৌদ্ধধর্মের উপবাস
এটি গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম। বৌদ্ধধর্মের মৌলিক যে ১৩ টি নীতি আছে যেগুলো পালন করার দ্বারা তাদের ভাষ্যমতে তারা সুখী জীবন-যাপন করতে পারে, তারা উপবাস যাপনকে উক্ত ১৩ টি নীতির অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা উপবাস যাপনকে নিজেদের চরিত্র পবিত্র রাখার একটি শক্তিশালী মাধ্যম মনে করে থাকে। বৌদ্ধধর্মের গুরু কয়েকদিন লাগাতর উপবাস জীবন পালন করে থাকে। নিজের অপরাধ থেকে তওবা করে থাকে।
বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুবার্ষিকীর সাথে প্রথম ৫ দিন তারা উপবাস পালন করেন। এই ৫ টি উপবাস বৌদ্ধধর্মের গুরুরা পুরাপুরি পালন করে থাকে। তবে যারা অনুসারী তাদের উপর পূর্ণ ৫ টি উপবাস পালন করা জরুরি নয়। এই ৫ দিন উপবাস যাপনে তাদের জন্য শুধু গোশত খাওয়া নিষেধ।
মুসলমান ছাড়া যদিও অন্যজাতি বিভিন্ন উপায় ও নামকরণে উপবাস পালন করে থাকলেও শরিয়ত কর্তৃক তাদের এসব উপাসনার জন্য দুনিয়া বা পরকালে কোনো প্রতিদান পাওয়ার ঘোষণা কোরআন হাদিসের কোথাও নেই।
দুনিয়া ও পরকালে প্রতিদান পাওয়ার ঘোষণা একমাত্র মুসলমানদের রোজা রাখার ক্ষেত্রেই দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে রমজান মাসের সবগুলো রোজা সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।