বিনোদন ডেস্ক : বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত গান করলেও দুই যুগেরও বেশি সময় বাংলাদেশ বেতারের জন্য গান করেননি আঁখি আলমগীর। অবশেষে ৬ অক্টোবর বেতারের জন্য নতুন একটি গান করেছেন। আঁখির সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
দুই যুগ পর বাংলাদেশ বেতারে গাইলেন।
এত দীর্ঘ বিরতি পড়ল কিভাবে?
১৯৯৪ সালে আমি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিবন্ধিত শিল্পী হই। একই বছর ‘বিদ্রোহী বধূ’ ছবি দিয়ে প্লেব্যাকেও অভিষেক হয় আমার। তখন একের পর এক প্লেব্যাক, স্টেজ শো ও অডিও অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মাঝখানে দুই-একবার বেতারের জন্য গেয়েছিলাম, তাও ২০০০ সালের আগে।
বলতে গেলে দুই যুগেরও বেশি সময় পরে ৬ অক্টোবর বেতারের জন্য গাইলাম। স্টুডিওতে গিয়ে আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করেছে। কেন এত দিন গাইনি! এই দীর্ঘ বিরতির জন্য বেতার কর্তৃপক্ষ দায়ী ছিলেন তা কিন্তু নয়। আবার আমিও দায়ী নই।
মাঝখানে বেতার থেকে আমাকে কয়েকবার ডাকা হয়েছিল, সময় দিতে পারিনি। তাঁরা হয়তো মনে করেছিলেন, আমি উৎসাহী নই। পরে আমিও যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করব, সেটাও হয়ে ওঠেনি।
রবিবার আমার রেকর্ডিং মাত্র দেড় ঘণ্টায় সম্পন্ন হয়েছিল। এর পরও আমি সাত-আট ঘণ্টা বেতারে ছিলাম—অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে।
খুব দারুণ একটা সময় পার করেছি। এবার যে গানটি করেছি তার শিরোনাম ‘ভালোবেসে আর ভুল করব না’। লিখেছেন ফজলুল হক সিদ্দিকী, সুর করেছেন মোহাম্মদ সাদেক আলী।
মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন শো করতে। কেমন ছিল এবারের সফর?
খুব ব্যস্ততার মাঝে ছিলাম। শো হয়েছে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও ফিলাডেলফিয়াতে। যুক্তরাষ্ট্রে আমার বাবা ও মায়ের দিকের অনেক আত্মীয় আছেন। এক দিন করে সময় দিলেও এক মাস কেটে যায়। তা ছাড়া আমার বন্ধুদেরও বেশির ভাগ সেখানে থাকে। এবার কারো সঙ্গেই সেভাবে দেখা করতে পারিনি। শোগুলো করেই ফিরে এসেছি। সামনে আবার সেখানে যেতে হবে। তখন সবাইকে সময় দেব।
গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে ফিরলেন। সেখানেও কি শো করতে গিয়েছিলেন?
না। আমার মেয়েদের নিয়ে অবকাশ যাপন করতে গিয়েছিলাম। ২৪ সেপ্টেম্বর দেশটিতে যাই, ছিলাম ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। মা-মেয়েরা মিলে দারুণ কিছু সময় কাটিয়ে এলাম।
অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে দুই মাস পার করেছে। একজন শিল্পী হিসেবে কী কী পরিবর্তন দেখছেন?
এখনো তো শিল্পীরা কাজ শুরু করতে পারেনি। সিনেমা-নাটক বা কনসার্ট—পুরোদমে ছন্দ্যে ফিরতে আরো সময় লাগবে। মানুষও এখনো প্রস্তুত নন বিনোদনের দিকে নজর দিতে। একটা ঘর অগোছালো থাকলে নিশ্চয়ই আপনি আগে সেটা গোছাবেন। তারপর ফ্রেশ হয়ে তো গান কিংবা সিনেমা দেখবেন। আমাদের দেশটাও এখন অগোছালো। আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটাকে গুছিয়ে নিক।
সর্বশেষ মার্চে গানচিত্র ‘কফির পেয়ালা’ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর আর নতুন গানে পাওয়া যায়নি আপনাকে…
পরিবারকেও তো সময় দিতে হয়। বড় মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, ছোট মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। এই সময় তাদের প্রপার গাইডলাইন দরকার। সেটা দেওয়ার জন্যই গানে সেভাবে নজর দিতে পারছি না। মেয়েরা একটু স্টাবলিশড হলেই আবার নতুন গান-গানচিত্র প্রকাশে ফিরব।
এ বছরই গানে আপনার তিন দশক পূর্ণ হলো। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব কষেছেন?
আমাকে মানুষ চেনে, আমার গান ভালোবাসে, জাতীয়ভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছি—এগুলোই তো বড় পাওয়া। এখনো কোথাও কনসার্ট করতে গেলে দর্শকের যে ভীড় দেখি, উচ্ছ্বাস দেখি সেটা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। একজন শিল্পী হিসেবে তিন দশক এভাবে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়াটা নিশ্চয়ই ভাগ্যের। আমার কাছে প্রথম থেকেই ক্যারিয়ারটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। যেহেতু সারা দেশের মানুষ আগে থেকেই বাবাকে (অভিনেতা আলমগীর) এক নামে চেনে, আমাকে আলাদা করে চেনানোটা সহজ ছিল না। তবে বাবা সব সময় আমাকে সাহস দিয়েছিলেন। জানি না, কতটুকু পেরেছি। তবে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
মাঝখানে আপনাকে টিভি উপস্থাপনা ও মডেলিংয়ে দেখা গেছে। এখন করছেন না কেন?
নতুন ধরনের কোনো অনুষ্ঠান হলে উপস্থাপনায় আগ্রহী হয়েছি। সর্বশেষ চ্যানেল নাইনে ‘তবুও গান’ নামে একটা ঈদের অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেটি ছিল নাটকের গান ও গায়ক-গায়িকা নিয়ে। মডেলিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই, ভালো পণ্য ও ভালো নির্মাতা হলে করতে আপত্তি নেই।
ওয়েব ছবি বা সিরিজে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সেটার কোনো খবর আছে?
না। আমি কখনোই শিক্ষানবিশ অভিনেত্রী হতে চাই না। এই বয়সে ছোট ছোট চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছা নেই। সরাসরি আমার ওপর কোনো গল্প হলে ভেবে দেখব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।