বিনোদন ডেস্ক : ছোট পর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু মারা গেছেন। বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে রাজধানী উত্তরায় অভিনেত্রীর বাসা থেকে তাঁর একজন বন্ধু ও ছোট বোন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অভিনেত্রীর গলায় হালকা দাগের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়।
পরে চিকিৎসক পুলিশ ডাকলে তাঁকে রেখে পালিয়ে যান অভিনেত্রীর বন্ধু।
ধারণা করা হচ্ছে, হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছেন। তবে মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের বরাত দিয়ে এ খবর জানান তিনি।
শোকাহত একটি ছবি শেয়ার করে তিনি আরো লিখেছেন, ‘পুলিশ ডাকাতে সেই বন্ধু চলে গেলে এখন পুলিশ তাকে খুঁজছে। অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রতিনিধিগণ হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। হাসপাতাল এবং দাফনসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সব কিছু অভিনয়শিল্পী সংঘ সম্পন্ন করবে।’
এদিকে হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শোবিজ অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে।
অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা ফেসবুক পোস্টে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘হিমু! দেখা হয় না অনেক দিন। তাই বলে আর দেখা হবে না! কী হলো এটা।’
অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহ লিখেছেন, ‘কত কাজ একসাথে করেছি হিমু। এত অভিমান কেন রে? অনন্তলোকে শান্তিতে থাকিস।’
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রিয় Homayra Himu
যদিও তোমার সাথে অনেক দিন কথা হয়নি, তাও এক বছর হলো।
কিন্তু কাজটা তুমি একদম ভালো করোনি। ভীষণ রাগ হচ্ছে।
যত যাই হোক, জীবন একটাই আর জীবন সুন্দর। বেঁচে থাকাটা অনেক আনন্দের।
আসলেই তুমি একটা অন্যায় কাজ করেছ নিজের উপর। একা একা চলে গেলে?? নিজে নিজেই?? তোমার আশেপাশের মানুষ একদম ভালো ছিল না। তোমাকে বকাও দিয়েছিলাম। আজ মনে হচ্ছে, বকাটা কন্টিনিউ করতাম যদি।
এটা কেন করলে??
তারপরও পরপারে ভালো থেকো এই প্রার্থনা
সব সময়।’
হুমায়রা হিমুর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। লিখেছেন, ‘বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ নেই।’
অভিনেত্রী অহনা রহমান লেখেন, ‘হুমায়রা হিমু শান্তিতে বিশ্রাম প্রিয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ সঙ্গে একটি লাভ ইমোজি যোগ করেন এই অভিনেত্রী।
লক্ষ্মীপুরের মেয়ে হুমায়রা হিমু, ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরেই কাটান। মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় হাইফাই কৌতুক শিল্পগোষ্ঠী ও ফ্রেন্ডস নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। পুরো নাম ছিল হুমায়রা নুসরাত হিমু। ২০০৫ সালে যখন প্রথম টেলিফিল্মে অভিনয় শুরু করেন তখন তাঁর নাম দেওয়া হয় হুমায়রা হিমু। ২০০৬ সালে টেলিভিশন নাটক ‘ছায়াবীথি’তে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। একই বছর ‘পিআই’ (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর) নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। তারপর ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ ছাড়াও অভিনেত্রীকে ‘চাপাবাজ’, ‘বাকেরখনি’, ‘বউ বিরোধ’, ‘গোলমাল’, ‘নানান রঙের মানুষ’ ও ‘গিনিস বুকে নাম’ ধারাবাহিকে দেখা গেছে।
ছোট পর্দার পাশাপাশি হিমু নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্রেও। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার মাধ্যমে এই ভুবনে তাঁর অভিষেক হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ চলচ্চিত্রে ‘অরু’ চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা কুড়ান তিনি। ২০১৪ সালে নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল পরিচালিত ‘এক কাপ চা’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হিমু। তারপর সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন দেওয়ান নাজমুলের পরিচালনায় ‘তোরে কত ভালোবাসি’ সিনেমায়। সিনেমাটি মুক্তি পায়নি।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে পর্দায় দর্শক হৃদয় জয় করেছেন হুমায়রা হিমু। তবে কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না। এ নিয়ে অভিনেত্রীর মধ্যে একরকম অভিমানও কাজ করেছিল। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভিউ না থাকার কারণে তাঁকে সেভাবে অভিনয়ের সুযোগ দিতেন না পরিচালক ও প্রযোজকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।