আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলামের শুরু থেকেই মুসলিমদের ওপরে চলত নানা পর্যায়ের নির্মমতা। মক্কায় মুশরিকরা আর মদিনায় ইহুদিরা মুসলিমদের নির্যাতন করত। মুসলিমদের রক্তে শীতল হয়েছিল তপ্ত মরুভূমি। এমনকি সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। এমনই কিছু নির্মমতার সাক্ষী পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিকের অন্তর্ভুক্ত দ্বীপ গোরি।
মুসলমানদের ওপর নির্দয় বর্বরতার সাক্ষী এ দ্বীপ ঠিক আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত। ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩৫০ মিটার প্রস্থের ছোট এই দ্বীপ নানা ইতিহাস আর রহস্যে ঘেরা। সে ইতিহাস আনন্দ কিংবা উজ্জ্বলতার নয়, সে কাহিনি শুধুই অত্যাচার আর কান্নার।
এই ছোট দ্বীপেই মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের দ্বীপ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। যেখানে অন্তত ৩০০ বছর ধরে মুসলিমদের ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন করে মেরে পুতে রাখা হতো। মুসলিম দাস-দাসিদের ওপর নির্বিচারে গুলি করার জন্য ব্যবহার করা হতো ৬ হাজার ৬৪৬ টনের কামান।
ইতিহাসবিদ আনা লুসিয়া আরাউজোর আলোচনা অনুসারে ফ্রান্স যখন সেনেগাল শাসন করত তখন সেনেগালের দাস-দাসিদেরকে জোর করে জাহাজের শিকলের সঙ্গে বেঁধে এই দ্বীপে রেখে আসতো। যারা জাহাজ থেকে নামতে না চাইত, তাদের জাহাজ থেকে এই মহাসাগরে ফেলে দেওয়া হতো এবং এ মানুষগুলো হাঙর মাছের আহার হয়ে যেতো।
আফ্রিকা থেকে লাখ লাখ কৃষ্ণবর্ণের মানুষদের জোর করে বন্দি করে ইউরোপ ও আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করানো হতো। মানবিকতার জন্য চরম লজ্জাজনক সেই প্রথা বাস্তবায়নে গোরি আইল্যান্ডকে ব্যবহার করা হতো।
মাত্র ৮ বর্গফুটের একটা ছোট ঘরে একটি মাত্র জানালা। সেখানেই গাদাগাদি করে রাখা হত ৩০ জন দাসকে। এই ছোট ঝুপড়ি ঘরগুলো ছিল অসুখ-বিসুখের কারখানা। মোটা শেকল দিয়ে বেঁধে বসিয়ে রাখা হতো দাসদের। খাবার জুটত দিনে মাত্র একবার। তাদের পরনে থাকতো একটুকরো কাপড়, শরীরের অধিকাংশ অংশই থাকতো নগ্ন। একটা সরু ঘরে তাদের ঘুমাতে দেওয়া হতো। সেখানেই মেঝের ওপর শুয়ে থাকত তারা।
সবচেয়ে দুর্বিষহ ছিল মায়ের থেকে শিশুদের আলাদা করে এতটাই দূরে রাখা হত যে, শিশুদের কান্না মায়েদের কান পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। আরেকটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য ছিল ‘ডোর অব নো রিটার্ন’ নামের একটি দরজা। সেই দরজা পেরিয়ে একবার যে ওপারে গেছে, আর কখনও ফেরেনি।
এই চরম নির্যাতন মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করতো কিছু দাস। প্রতিবাদের শাস্তি হিসেবে তাদেরকে রাখা হতো ছোট অন্ধকার ঘরে। ওই ঘরে সমুদ্রের জল ঢুকতো আর একসময় বন্দিরা মারা যেতো।
৩০০ বছরেরও বেশি দুঃসহ নির্যাতনের অবসান ঘটে ১৮৪৮ সালে। তখনও সেখানে ৫ হাজার বন্দিসহ মোট ৬ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। যদিও পরে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেয় এই গোরি আইল্যান্ডকে। আর মুসলিম দাসদের বন্দিশালা হিসেবে ‘স্লেভ হাউস’কে করা হয় জাদুঘর। এ ভাবেই নির্যাতনের নিষ্ঠুরতম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে গোরি আইল্যান্ড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।