বিনোদন ডেস্ক : অগ্রিম টাকা নিয়ে অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণা ও স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। কলকাতার ‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠান থেকে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া নোবেলকে শনিবার সকালে তার ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল।
প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও গানে ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ না করে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করে আসছিলেন নোবেল। তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তার প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। তার জন্য পাবনার মেন্টাল হাসপাতালেও নাকি গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে।
২০২১ সালে ফেসবুকে নানা গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছিলেন নোবেল। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভক্তরা। পোস্টগুলো দেখে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, নোবেলের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। তার মানসিক চিকিৎসা দরকার। এ জন্য তাকে পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন অনেকে।
ভক্তদের পরামর্শ মেনেই নাকি ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি পাবনার মেন্টাল হাসপাতালে গিয়েছিলেন নোবেল। সঙ্গে নিয়েছিলেন প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদকেও। সেখানে তিনি হাসপাতালটির রোগীদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান। এছাড়া তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও গাইতে শোনা যায়।
সেই ছবি এবং ভিডিও পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সে সময় নোবেলের পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে যাওয়ার ওই ঘটনা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন করেন, নোবেলের কি তবে সত্যিই মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে? সত্যি কি তিনি চিকিৎসা করাতে পাবনায় গিয়েছিলেন?
এই বিতর্কের পেছনে অবশ্য কারণ ছিল। এক ইউটিউবারের সঙ্গে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঝামেলায় জড়ানোয় ওই ইউটিউবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালের মে’র প্রথম দিকে নোবেলকে ডেকে পাঠিয়েছিল ডিএমপির সাইবার ক্রাইম শাখা। সেখানে গিয়ে গায়ক বলেছিলেন, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, চিকিৎসা চলছে।
সে কারণেই তখন অনেকে জোর দিয়েই বলেছিলেন যে, চিকিৎসার জন্য কথাবার্তা বলতেই নোবেল পাবনার মেন্টাল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নাকি বেশ কিছুদিন সেখানকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেও ছিলেন নোবেল।
যদিও সে সময় এই গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নোবেলের বাবা মোজাফফর হোসেন নান্নু। তিনি দাবি করেছিলেন, চিকিৎসার জন্য নয়, বেড়াতে বের হয়েছিলেন নোবেল। পাবনার মানসিক হাসপাতালটা ভিজিট করেছে ও। ওখান থেকে যশোর, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফিরবে। সঙ্গে ওর স্ত্রীও আছে।’
কিন্তু নোবেলের বাবার দাবি তখন মানেননি নেটিজেনরা। তাদের যুক্তি ছিল, সাইবার ক্রাইমের অফিসে গিয়ে নোবেল বলে এসেছে তার মানসিক চিকিৎসা চলছে। মানসিক সমস্যায় আছেন বলেই কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ফেসবুকে উল্টাপাল্টা স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। জেমসের মতো কিংবদন্তি শিল্পীকে হেয় করে কথা বলেছেন।
কিন্তু চিকিৎসা নিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি নোবেল। অবশেষে প্রতারণা ও স্ত্রীর অভিযোগে শনিবার গ্রেপ্তার হলেন তিনি। প্রতারণা মামলায় তাকে এক দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের একটি স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য অগ্রিম ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়েও সেখানে যাননি গায়ক নোবেল। গত ১৬ মে এই অভিযোগে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬–এর মো. সাফায়েত ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকার একটি আদালতে নালিশি মামলা করেন।
এরপর ১৭ মে আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঢাকার মতিঝিল থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে বলেন। আগামী ৯ জুলাই আদালত এ বিষয়ে থানাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে নোবেলকে তালাক দেয়া স্ত্রী সালসাবিল শনিবার বিকালে ডিবি অফিস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নোবেল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। তাকে একজন নারী এয়ার হোস্টেজ মাদক সরবরাহ করেন। মাদক নেয়ায় বাধা দিলে নোবেল তাকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ করেন সালসাবিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।