জুমবাংলা ডেস্ক:শেষ হয়ে আসছে অপেক্ষার প্রহর। ২৫ জুন উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। পরদিন সকাল ৬টায় শুরু হবে যানবাহন চলাচল। ফেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পারপার হওয়া যানবাহন পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে মাত্র ৬ মিনিটে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের এক হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ফেরিতে পদ্মা পারাপার হয় ১ হাজার ৭৫৭টি যানবাহন। ২৬ জুন থেকে এসব যানবাহন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে। এসব যানবাহন থেকে শুরুর দিকে প্রতি মাসে টোল আদায় হবে গড়ে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
২০২০ সালের নভেম্বরে সেতু বিভাগকে দেয়া তথ্যে বিআইডব্লিউটিসি জানায়, রুটটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৮৭টি ট্রাক, ৮৩টি বাস ও ১ হাজার ২৮৭টি হালকা যানবাহন ফেরিতে পারাপার হয়। এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন টোল আদায় হয় ২৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতি মাসে টোল আদায় হয় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সরকারের সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, বর্তমানে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান টোলহারকে ভিত্তি ধরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে পদ্মা সেতুর টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিআইডব্লিউটিসির ফেরি থেকে যে পরিমাণ টোল আদায় হয়, পদ্মা সেতুর টোল হবে তার দেড় গুণ বেশি। বর্তমানে পদ্মা পারাপার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে বিআইডব্লিউটিসি ও সেতু বিভাগের প্রাক্কলন বলছে, উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে প্রতি মাসে গড়ে টোল আদায় হবে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বছরে আদায় হবে ১০৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
তবে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রাক্কলনে শুধু মাওয়া-জাজিরা রুটে চলাচল করা যানবাহনের সংখ্যা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে যাতায়াত করা যানবাহনের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়নি। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ ব্যবহার করা যানবাহনের একটা বড় অংশ পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল শুরু করবে। অন্যদিকে ফেরিতে পারাপারে বেশি সময় লাগার কারণে বেশির ভাগ যানবাহন দিনে একটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের ট্রিপের সংখ্যা বাড়বে। ফলে টোল আদায়ের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, বাস্তবে আদায় হতে পারে তার চেয়ে বেশি।
পদ্মা সেতুর বিস্তারিত নকশা প্রতিবেদনেও টোল আদায়ের একটি প্রাক্কলন করা হয়। এ প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২ সালে সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এর মধ্যে ট্রাক পারাপার হবে ১০ হাজার ২৪৪টি। বাস ও হালকা যানবাহন পারাপার হবে যথাক্রমে ৮ হাজার ২৩৮ ও ৫ হাজার ৪৭২টি। এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা টোল আদায় হওয়ার কথা। এ হিসাবে প্রতি মাসে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ ও প্রতি বছর ১ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা টোল আদায় হবে।
সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন জানিয়েছেন, ম্যানুয়াল ও অটোমেশন দুই পদ্ধতিতেই পদ্মা সেতুর টোল আদায় করা হবে। অটোমেশন পদ্ধতিতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হবে টোলের আনুষ্ঠানিকতা। আর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোলবুথে নগদ টাকা বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টোলের টাকা দেয়া যাবে। তবে পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের জন্য অটোমেশন পদ্ধতি চালু করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সরকারের অর্থ বিভাগের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণের পরিমাণ ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের সঙ্গে করা সেতু কর্তৃপক্ষের চুক্তি অনুযায়ী যানবাহন চলাচল শুরুর প্রথম বছরেই (২০২২) ৫৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে কোনো কোনো বছর ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয়, নদীশাসন কাজ, ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যয়ও টোল আয় থেকে নির্বাহ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, সাত-আট বছরেও টোল থেকে বার্ষিক কিস্তির টাকা ওঠানো সম্ভব হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।