জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁদের যেমন খুঁত আছে; পদ্মা সেতুতেও আছে। আর এ খুঁতটি হলো এর রেললাইন। বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীকে পরিণত হওয়া এই গর্বের সেতুতে রেলপথ সিঙ্গেল লাইনের। ১০০ বছর স্থায়িত্বের বহুমুখী সেতুটিতে রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত করার সুযোগ নেই। ফলে একটি ট্রেন যখন পদ্মা সেতু পাড়ি দেবে; বিপরীত দিকের রেলকে তখন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
২০০৩ সালের ১৬ মে শুরু হয়ে ২০০৫ সালের মার্চে শেষ হয় পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা। সমীক্ষায় রেললাইন যুক্ত রাখার সুবিধাসহ ২৫ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রকল্প অনুমোদনের সময় সেতুতে রেল যুক্ত করার বিষয়টি বাদ যায়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেললাইন যুক্ত করার নির্দেশ দেন। যমুনায় ১৯৯৮ সালে নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর এক প্রান্তে রয়েছে সিঙ্গেল লাইনের রেলপথ। সে কারণে সেতুটিতে দিনে ২৪টির বেশি ট্রেন চলতে পারে না। সেতুতে ফাটলের কারণে ট্রেন চলে ঘণ্টায় মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে। যমুনার তিক্ত অভিজ্ঞতায় নিচতলায় ট্রেন ও ওপরতলায় গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা রেখে পদ্মায় দ্বিতল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ২০০৯ সালে।
২০০৭ সালে অনুমোদনের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। রেল সুবিধা যুক্ত করে ২০১১ সালে ডিপিপির প্রথম সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। রেলেওয়ের প্রস্তাব ছিল সেতুতে ডাবল লাইনের ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের। কিন্তু ব্যয় কমাতে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে সেতুর নিচতলায় (লোয়ার ডেক)।
পদ্মা সেতুতে ডাবল স্টেক কন্টেইনারবাহী ট্রেন চলতে পারবে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। পণ্যবাহী ট্রেন চলতে পারবে ১২৫ কিলোমিটার গতিতে। ডুয়েলগেজ রেললাইনের কারণে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ; উভয় ধরনের ট্রেন চলতে পারবে। এত সুবিধা থাকলেও সিঙ্গেল লাইনের রেলপথ তৈরির কারণে যমুনার সমস্যা পদ্মাতেও হবে।
যমুনা সেতুর সমস্যা কাটাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মার মতো নদীর ক্ষেত্রে আরেকটি রেল সেতু নির্মাণ দুরূহ ও ব্যয়বহুল। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ পথের ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
পদ্মা রেল সংযোগ ও খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যুক্ত হবে ঢাকা। তখন পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বাড়লে যমুনার মতো পদ্মাতেও একটি রেল পারাপারের সময় আরেকটিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে।
পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেকে রেললাইন ছাড়াও ৭৬২ মিলিমিটার ব্যাসের গ্যাস পাইপ রয়েছে। ১ দশমিক ৬৭৬ মিটার প্রশস্ত (প্রায় সাড়ে ৫ ফুট) ডুয়েলগেজ রেললাইনের দুই পাশে সেতুর সার্ভিস ওয়াকওয়ে রয়েছে। রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার জায়গা নেই।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, সেতুর নকশায় যে লোড ডিজাইন (ভার বহন) করা হয়েছে, তাতেও ডাবল লাইনের সুযোগ রাখা হয়নি। ব্যয় কমাতেই সিঙ্গেল রেললাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রেল সংযোগ প্রকল্পের কেউ এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রকল্পের একজন মাঝারি সারির কর্মকর্তা বলেছেন, বড় জোর পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ত ডাবল লাইন নির্মাণে। কিন্তু ১০০ বছরের নিশ্চয়তা পাওয়া যেত। ১০৭ বছর আগে নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ডাবল লাইনের, যা এখনও প্রয়োজন মিটিয়ে চলেছে।
সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।