জুমবাংলা ডেস্ক: নিম্ন জলাভূমিবেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জ। ধানের পর এখানকার চাষিদের আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত মাছ চাষ। খেতেও সুস্বাদু গোপালঞ্জের মিষ্টিপানির মাছ। আর তাই তো মাছ চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন জেলার পাঁচ উপজেলার ১৭ হাজার চাষি। পদ্মা সেতু নিয়ে তাঁরাও গুনছেন আশার দিন। বর্তমানে এখানকার চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত মাছ বিভিন্ন জেলায় পাঠান মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে; এতে পান না ন্যায্য দাম। পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকার আড়তে নিয়ে মাছ বেচবেন তাঁরা, লাভবান হবেন আরও বেশি। এতে তাঁদের আয়ও বাড়বে ২০০ কোটি টাকার বেশি। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক মনোজ সাহা-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় ১১৪টি বিল, ১২৫টি খাল, ৫টি নদী ও ৬টি বাঁওড় রয়েছে। এসব উৎসে প্রতি বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন পুঁটি, ট্যাংরা, শোল, মাগুর, কই, শিং, টাকি, খলিশা, গজার, রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, ইলিশ, নান্দেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। জেলার ১৬ হাজার ৯৯৮টি পুকুর-ঘের ও মৎস্য খামারে ১৬ হাজার ১৮৫ জন খামারি ৩০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, গ্রাসকার্পসহ কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদন করেন। এ ছাড়া ১ হাজার খামারি ১ হাজার ঘেরে ৭৫২ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন করেন। সব মিলিয়ে জেলায় ৪০ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি মাছ গড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে চাষি ও মৎস্যজীবীরা বিক্রি করেন। সে হিসাবে এ জেলায় ৮১৯ কোটি ৪ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়।
পদ্মা সেতু চালু হলে চাষিরা সরাসরি ঢাকায় গিয়ে মাছ বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি কেজি মাছে অন্তত ৫০ টাকা বেশি পাবেন তাঁরা। এ হিসাবে গোপালগঞ্জে মাছে আয় বাড়বে প্রায় ২০৫ কোটি টাকা।
সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের মাছ চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, আমি মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমরা বিলের শ্যাওলা, গমের ভুসি ও চালের কুঁড়া দিয়ে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করি। তাই এর স্বাদ নদী বা বিলের মাছের মতোই। সারাদেশে এসব মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা সরাসরি ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে এই মাছ বিক্রি করতে পারি না। মাছ পাঠালে ফেরি ঘাটেই পচে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পদ্ম সেতু চালু হলে ঢাকায় নিয়ে মাছ বিক্রি করতে পারব। এতে প্রতি কেজি মাছে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা বেশি পাব। বেশি দামে মাছ বিক্রি করে পরিবহন খরচ বাদেও বছরে আরও অন্তত ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করতে পারব।
মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের মাছ চাষি খলিলুর রহমান সোহেল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা সরাসরি ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছ বিক্রি করে আরও বেশি টাকা আয় করতে পরব। মৎস্য খাদ্যনির্ভর খামারিদের কথা চিন্তা করে মাছের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানান তিনি।
মাছের ফড়িয়া জামাল শেখ বলেন, গোপালগঞ্জের মাছ আমরা খামারির কাছ থেকে কিনে সাধারণত ফরিদপুরের ভাঙ্গা, ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় চালান করি। এতে আমাদের পরিবহন খরচ বাদে কিছু লাভ থাকে। এখন পদ্মা সেতু খুলে দিলে খামারি সরাসরি মাছ বিক্রি করে লাভবান হবেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলাতেই মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন খামার গড়ে উঠছে। এ জেলায় কৃষি ও মৎস্যনির্ভর শিল্প গড়ে উঠলে মাছের খাবার আরও সহজলভ্য হবে। তখন মাছ চাষ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে এ অঞ্চলে মাছ চাষ বৃদ্ধি, মৎস্য ও কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জেলার এক বিশাল জনগোষ্ঠী তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।