জুমবাংলা ডেস্ক : পদ্মাসেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণকে কেন্দ্র করে এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা জালিয়াতির ঘটনায় বাধ্যতামূলক অবসর হওয়া এক সার্ভেয়ারকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
তদন্তে জালিয়াতিতে সহায়তার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের সাবেক সার্ভেয়ার মাইনুল হাসান। এ অপরাধে তাকে গত বছরের নভেম্বরে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুন তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমানের সই করা আদেশে তার বাধ্যতামূলক অবসরের শাস্তি কমিয়ে গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে পাঁচ বছরের জন্য বেতন কমিয়ে দেয়া হয়।
আদেশে জানানো হয়েছে, মাদারীপুর জেলার এলএ শাখার দায়িত্ব পালনকালে মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার, মাদারীপুরকে আহ্বায়ক করে একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
উপ- পরিচালক, স্থানীয় সরকারের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলাধীন শিবচর উপজেলায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অধীন ০৬/২০১৭-২০১৮ নম্বর এলএ কেসে অধিগ্রহণ করা সাবাজনগর মৌজার বিআরএস ৩৮৯, ৩৯৯, ৫০০, ৪০৪, ৪০৫, ও ৪০৬ নম্বর দাগে মোট ৩.৩৭ একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। আলী হোসেন মল্লিক ও মো. শাহীন নামে কয়েকজন জাল কাগজ বানিয়ে খাস জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আবেদন করেন। যাচাই না করেই পরস্পর যোগসাজশে তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে সুপারিশ ও সহায়তা করেন মাইনুল হাসান।
সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে ও সরকারি স্বার্থের তোয়াক্কা না করে ওই জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে সুপারিশ ও সহযোগিতা করে এক কোটি ৬৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৮২ টাকা ক্ষতিসাধন করেন তিনি।
নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এ মামলায় অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে বিধি মোতাবেক তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর গুরুদণ্ডারোপ করা হয়।
এই আদেশের বিরুদ্ধে মাইনুল হাসানের আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আপিল মামলা হয়৷ শুনানিতে অভিযোগের বিষয়ে আপিলকারীর বক্তব্য এবং সরকারপক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।
আদেশে জানানো হয়, নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিভাগীয় মামলা পরিচালনায় বিধিমালায়বর্ণিত নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়নি, অভিযোগের ওপর প্রাপ্ত তথ্য যথার্থ। শুনানিতে আপিলকারীর বক্তব্যও সন্তোষজনক বিবেচিত হয়নি।
পর্যালোচনায় আরও দেখা যায় যে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হলেও তদন্তে তার বিরুদ্ধে একই বিধি মোতাবেক অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শেষে অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরোপিত দণ্ড মাত্রাতিরিক্ত মর্মে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
এজন্য বিধি মোতাবেক মাইনুল হাসানকে বিভাগীয় মামলায় ‘বাধ্যতামূলক অবসর’ গুরুদণ্ডাদেশের পরিবর্তে বর্তমান বেতন গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে পাঁচ বছরের জন্য অবনমিতকরণ লঘুদণ্ড আরোপ করা হলো। দণ্ডের মেয়াদকাল বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনাযোগ্য হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।