জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদকে সামনে রেখে এলাচের দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। পাইকারি ও খুচরা মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসলার পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দামে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
এলাচ মূলত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে পাইকারিতে এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি অন্তত হাজার টাকা বেশি দামে। খুচরা মার্কেটে এসে দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। আবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের সুপারশপগুলোতে একই এলাচ মোড়কজাত করে বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে।
ভারতের মসলা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শুরুতে ভারতে মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ গড়ে ১ হাজার ২০০ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ওই একই এলাচ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি করে বিক্রি করছেন প্রায় ৪ হাজার টাকায়।
জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি করা ওসব এলাচের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৬৮২ টাকা। মসলা আমদানিতে সরকারের ট্যাক্স ৫৯ শতাংশ নির্ধারিত। সেজন্য গুণতে হচ্ছে আরও কেজিপ্রতি ৯৯২ টাকা। এতে দাম পড়ছে প্রতি কেজি ২ হাজার ৬৭৪ টাকা। যা বন্দরের চার্জ ও ক্যারিং কস্টসহ সবকিছু মিলিয়ে সর্বোচ্চ বাজার মূল্য হতে পারে ২ হাজার ৭৫০ টাকা।
দেশের মসলার পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে এসে হয়ে যাচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। পাড়া-মহল্লার একদম খুচরা দোকানে ভোক্তারা যখন ২৫ বা ৫০ গ্রাম এলাচ কিনছেন, তখন তাকে কিনতে হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা কেজি দরে। সে হিসাবে প্রতি ৫০ গ্রাম এলাচ ২৫০ টাকা ও ২৫ গ্রাম ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজার বা মহল্লার দোকানের চেয়েও অস্বাভাবিক দাম সুপারশপে প্যাকেটজাত এলাচের। এসব সুপারশপে গ্রিন টাচ নামে একটি মোড়কজাত ৫০ গ্রামের প্যাকেট ৩৫৫ টাকা এবং ১০০ গ্রাম ৬৯৮ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, গত দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এলাচের দাম। দুই মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল পাইকারিতে ২ হাজার টাকার মধ্যে এবং খুচরায় ২ হাজার ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা। তথ্য বলছে, তখন ভারতে এলাচের দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ রুপি।
এদিকে, গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে এ মসলার দাম ৬২ শতাংশ বেড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে টিসিবি। তাদের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী ২০২৩ সালের কোরবানির ঈদে এলাচের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। আর এই দামের সঙ্গে বর্তমান বাজার দর তুলনা করলে মূল্য বৃদ্ধি দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন গুণ।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, কোরবানির ঈদে সারা দেশে এলাচের প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার টন। সেখানে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ টন। বাজারে চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ নেই। যে কারণে এলাচের দাম বেড়েছে। এখন এলাচ সরবরাহ কম থাকায় কিছু ব্যবসায়ী বেশি দাম নিচ্ছে। খুচরায় তার প্রভাব আরও বেশি পড়েছে।
ভারতে দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে এখন আর আগের দাম নেই। এছাড়া ডলারের মূল্য বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সমস্যায় অনেকে আমদানি করতে পারেননি। তবে এখনো আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন আমদানিকারক বলেন, মূলত এলসি সমস্যার কারণেই এলাচের দাম বেড়েছে। অনেকেই এলসি করা কমিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ডলারের দামও হঠাৎ বেড়ে গেছে। এখন এলসি করতে গেলে ১২৮ টাকায়ও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। দামের ক্ষেত্রে এর একটা প্রভাব রয়েছে। আবার এ সুযোগ নিয়ে আমদানিকারক থেকে কম দামে কিনে নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এলাচ মজুত করে বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন এবং বেশি মুনাফা করছেন।
ঢাকার মৌলভীবাজারের বড় পাইকারি ব্যবসায়ী হোসেন ট্রেডার্সের আলী হোসেন বলেন, আমদানিকারকরা যে দাম বলে দেন আমাদের সে দামে কেনাবেচা করতে হচ্ছে। দেশে মসলা আমদানিকারকের সংখ্যা হাতে গোনা। আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতি টন এলাচ তারা ২৬ থেকে ২৮ হাজার ডলারে আনছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি এলাচ আমদানিতে তাদের খরচ পড়ছে ৩ হাজার ২০০ টাকার মতো। তারা সে হিসেব করে আমাদের কাছে দাম নিচ্ছেন। আমরাও কিছুটা লাভ যোগ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি।
৩ হাজার ২০০ টাকায় আমদানি করা এলাচ কয়েক হাত বদলের পর, খুচরা দোকান হয়ে ভোক্তাদের কাছে এসে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। নিউমার্কেটের মসলা বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, প্রতি ২০-২৫ গ্রাম মসলা বিক্রি করলে ১-২ গ্রাম বেশি যায়। এক কেজি মসলা ৩০-৪০ ভাগে বিক্রি করতে হয়। যে কারণে অনেক ঘাটতি হয়। সে হিসাব ধরেই আমরা খুচরা ক্রেতাদের কাছে দাম ধরি, যার ফলে দাম বেশি পড়ছে।
কোন জিনিস ১ কেজি কিনলে হয়ে যায় ২ কেজি, আর ফেলে দেওয়ার সময় হয়ে যায় ৩ কেজি
সুপারশপে দাম বেশি প্রসঙ্গে আগোরা সেগুনবাগিচা শাখার ম্যানেজার আশিক বলেন, আমরা যাদের কাছ থেকে পণ্য নেই, সেসব সরবরাহকারী কোম্পানি দাম নির্ধারণ করে আমাদেরকে সরবরাহ করে। আমরাও সে হিসাবে সব পণ্য বিক্রি করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।