আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ডুবেছে পাকিস্তান। ৪৮ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখছে দেশটি। গত কয়েকমাস ধরেই সেখানে আটা, চা, চিনি, দুধ সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের হাহাকারের ছবি ধরা পড়েছে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে। যত দিন যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার মূল্য আকাশ ছোঁয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার দেশটিতে প্রতি লিটার দুধের দাম পাকিস্তানি মুদ্রায় ১৯০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১০ রুপি।
দুধের দাম নিয়ে করাচি মিল্ক রিটেইলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর ওয়াহিদ গাদ্দি ডনকে বলেছেন, এক হাজারেরও বেশি দোকানদার অতিরিক্ত দামে দুধ বিক্রি করছেন। এগুলি আসলে পাইকার বা দুগ্ধ খামারিদের দোকান, আমাদের সদস্যদের নয়।
তিনি আরও বলেন, দুগ্ধখামারি ও পাইকারি বিক্রেতাদের ঘোষিত দাম যদি প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে দুধের দাম আরও বাড়বে।
এদিকে গত দুইদিনে সেখানে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ রুপি বেড়ে ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১১০০রুপিতে। এছাড়াও প্রতি ডজন মুরগির ডিম ২৮০ থেকে ৩০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
সিন্ধু পোল্ট্রি পাইকারি বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল আখতার সিদ্দিকি বলেছেন, পোলট্রি মুরগির খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া খামারিরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের জ্বালানি স্টেশনগুলোতে পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দুষ্প্রাপ্যতা এবং সরকারের হুঁশিয়ারির মধ্যেই এ ঘাটতিতে দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তি নেমে এসেছে। পাঞ্জাবের শহরাঞ্চলের চেয়ে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক জ্বালানি স্টেশনে গত এক মাস ধরে তেলের সরবরাহ বন্ধ।
ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি ৪৮ বছরের সর্বোচ্চ। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে দেশটি। তবে বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের শেষ দিনে কোনো চুক্তিতে পৌছাতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। তবে দেশটির অর্থ সচিব জানিয়েছেন, শীঘ্রই একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে।
এদিকে বর্তমানে ১ ডলারের মূল্য ছিল ২৩০ পাকিস্তানি রুপিও বেশি। অর্থাৎ ১ হাজার রুপিতে ৪ ডলারও পাওয়া যাবে না। আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে তা হল রুপির দামের উপরে পাকিস্তান কোনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তা ছেড়ে দিতে হবে বাজারের হাতে। ফলে দুরন্ত গতিতে কমতে শুরু করেছে পাকিস্তানি রুপির দাম।
সম্প্রতি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সামনে এনেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত এক অর্থবর্ষে পাকিস্তানের সরকারি ঋণ ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি পাকিস্তানি রুপি। কিন্তু ২০২২ সালের জুনের শেষে এই ঋণ রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়ে হয় ৪৯ লাখ ২০ হাজার কোটি।
পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন তথ্য প্রকাশ করে সতর্ক করে বলছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত এক সপ্তাহে ১৭০ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে, যা শুক্রবার পর্যন্ত মাত্র ২.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই অর্থে মাত্র ২ সপ্তাহের খরচ চলবে পাকিস্তানের।
মূলত খাদ্যপণ্য যোগানে আমদানির উপরেই নির্ভর করতে হয় পাকিস্তানকে। সেখানেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ। এর ফলে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
এছাড়া গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের রেমিট্যান্স অনেক কমেছে। রেমিট্যান্স দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের একটি প্রধান উৎস। তাই রেমিট্যান্স হ্রাসও পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা বলা যেতে পারে। দেশের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স এখন চোরা পথে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।