আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মুখে মুখে ইমরান খানের নাম। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভালোবাসায় নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন অনেক আগেই। এজন্য কারাবন্দি থেকেও হিসাবের খাতার শীর্ষে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সেনা ফন্দিও থামাতে পারেনি তার জনপ্রিয়তার পারদ। ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন।
এদিন সকাল থেকেই পাকিস্তানজুড়ে তার সমর্থকদের দীর্ঘ সারি তার জনপ্রিয়তাকে আরও স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে শুরু করে। নির্বাচন শেষে শুরু হয় ভোট গণনা। ধীরে ধীরে প্রাথমিক ফলাফল আসতে শুরু করে। এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশ। দেশের ভোটকেন্দ্রগুলো তখন ‘কাপ্তান শোরে’ নাচছে। জাতীয় পরিষদ থেকে প্রাদেশিক পরিষদের বেশিরভাগ জয়ের আসনে একটাই নাম- পিটিআই। চূড়ান্ত ফলে ৯৮ শতাংশ আসনে জিতেছে খানের দল। এমনটাই নিশ্চিত হওয়ার পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠল না। হঠাৎই মধ্যরাতে থমকে যায় ইমরান খানের ভাগ্য! ফলাফল আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মাঝরাতের পরই বদলে যেতে শুরু করে নির্বাচনের ফলাফল।
সহিংসতার মধ্যেই নির্বাচনের দিন দেশজুড়ে খানের সমর্থকরা বিভিন্ন জায়গায় ভোট দেন। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় নির্বাচনে এগিয়ে যায় পিটিআই। পাঞ্জাব ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) শক্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে সেখানেও এগিয়ে যায় খানের দল। ভোটের হিসাবে পাঞ্জাব মোটেই খেলনা কিছু নয়- পাকিস্তান পার্লামেন্টের (জাতীয় পরিষদ) মোট আসনের প্রায় ৬০ শতাংশ। মধ্যরাতের কিছু আগে থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করে সবচেয়ে বড় এই প্রদেশটিতেই ব্যাপকভাবে হেরে যাচ্ছে পিএমএল-এন। তারপরই শুরু হয় ‘তেলেসমাতি কাণ্ড’। কিছুক্ষণ ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে থেমে থেমে ফল ঘোষণা শুরু হয়।
অস্বচ্ছতার শুরুটা এখান থেকেই। দেশটির বেশিরভাগ অংশে খানের জয়কে অস্বীকার করা হয়। যার জেরে ভোট কারচুপি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পিটিআই সমর্থকরা। প্রতিবাদের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ফলাফলগুলোকে আদালত এবং নির্বাচন কমিশনে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। দুর্ভাগ্যবশত, নির্বাচনের পর মুদ্রাস্ফীতি, দারিদ্র্য এবং বেকারত্বে ঠাসা দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও অনেক বেড়েছে। পাকিস্তান কীভাবে এবং কখন এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে তা বলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাদা মনে বললে, এবারের নির্বাচনে দেশের বড় বড় দল সামান্য সুযোগটুকুও দেয়নি পিটিআইকে। এমনকি নির্বাচনের আগেই এক প্রকার শেকল বেঁধে দেওয়া হয় খানের পায়ে। অযোগ্য ঘোষণা দিয়ে প্রথম ধাপেই বাধা দেওয়া হয়। এরপর স্বতন্ত্রের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তার দল পিটিআইকে। এমনকি নির্বাচনের প্রচারণার অনুমতিও দেওয়া হয়নি দলটিকে। দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট’ও কেড়ে নেওয়া হয়। এটা ছিল ইমরান খানকে হারানোর বড় ধরনের একটা কৌশলী ফাঁদ। কারণ, দেশের বেশিরভাগ নিরক্ষর মানুষই ছবি (প্রতীক) দেখে ভোট দেয়।
খান বর্তমানে ইসলামাবাদের আদিয়ালা কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়েন খান। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে খানের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে। যার প্রমাণ মেলে এবারের নির্বাচনে। পাকিস্তানে এমন জনপ্রিয়তা এর আগে দেখা যায়নি।
খানকে উপড়ে ফেলার এই ভোট চুরি তুলকালামের মধ্যেই এখন জোট গঠনে ছুটছে পিএমএল-এনসহ আরও বেশ কিছু দল। মূল সারিতে রয়েছে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
লেখক পরিচিতি : মোহাম্মদ জুবাইর উমর, পাকিস্তানের বর্ষীয়ান নেতা। পিএমএল-এনের সিনিয়র নেতা। সাবেক মন্ত্রী (২০১৩), সাবেক গভর্নর, সিন্ধু প্রদেশ (২০১৭)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।