বিনোদন ডেস্ক : রাজনৈতিক বৈরিতায় শিল্পের আদানপ্রদান বন্ধ। তবু ইতিহাসের ক্ষত কি সুরকে বেঁধে রাখতে পারে? ভারতকে ভাসিয়ে দিল কোক স্টুডিওর নতুন গান ‘পাসুরি’ দেশ-জাতি-ধর্মের ব্যবধান ভুলে স্রোতের মতো এসে পড়েছে একটি গান— ‘পাসুরি’। পাকিস্তানের জনপ্রিয় ‘কোক স্টুডিও’র ১৪তম সিজনের নতুন সংযোজন সেটি। গেয়েছেন আলি শেঠি এবং শায় গিল। কেবল কণ্ঠের জাদু কিংবা বাণীর মাদকতা নয়, গানের ভিডিয়োটিও অজস্র মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। সব থেকে আশ্চর্য, পাকিস্তানি গানটি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে ভারতে।
বহু মানুষ এই গানটি শুনেছেন, দেখেছেন ভিডিয়োটি। কেউ কাঁদছেন, কেউ হাসছেন। যেন কোটি কোটি মানবহৃদয়কে সভ্যতার খোলস ছাড়িয়ে শৈশবে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে ‘পাসুরি’। সুরকার শান্তনু মৈত্র বললেন, ‘‘অবিশ্বাস্য! এতটা ভাবিনি।’’ পাকিস্তানি নির্মাতারাও অবাক। ভাবেননি ভারত থেকেই এতখানি জনপ্রিয়তা পাবে তাঁদের সৃষ্টি।
কিন্তু কী আছে এই গানে? খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই প্রথম নয়। পাকিস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে জীবনমুখী গান, কাওয়ালি, সুফি সঙ্গীত, এমনকি বহু ব্যান্ডের গানেরও ভক্তসংখ্যা ভারত আর বাংলাদেশেই বেশি। গুলাম আলি কিংবা আবিদা পারভিনকে না হলে এ ভাবে নিজের করে নেন ভারতীয়রা? সেই সেতু আজও বাঁধা হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
এই কয়েক বছর আগেও ভারত-পাকিস্তান সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বজায় রেখেছিল। ছবি এবং গান তৈরির সময় কত শিল্পী পাকিস্তান থেকে এ দেশে এসে কাজ করেছেন, এখানকার শিল্পী গিয়েছেন ও দেশে। কিন্তু কালক্রমে রাজনৈতিক বৈরিতা সংস্কৃতির উপরও থাবা বসায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আতিফ আসলাম আর ভারতীয় অ্যালবামে গান না। বলিউডে পাকিস্তানি অভিনেতাদের প্রবেশ নিষেধ। পাকিস্তানেও ভারতীয় ছবি মুক্তি পায় না।
তবে আশির দশকে পাকিস্তানি সঙ্গীতশিল্পী রোহেল হায়াৎ যে উন্মাদনা নিয়ে ‘কোক স্টুডিও পাকিস্তান’ গড়েছিলেন, আজও সে টুকু ধরে রাখতে পেরেছেন। পশ্চিমী পপ জ্যামিং দিয়ে শুরু করে পাকিস্তানের নিজস্ব কাওয়ালিতে পৌঁছনো দীর্ঘ পথ।
তত দিনে ভারতও তার নিজস্ব ‘কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া’ শাখা খুলে উন্মাদনার স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানি ব্যান্ডের আদলে সঙ্গীত আবহ তৈরি হচ্ছে এ দেশে। কিন্তু রাজনৈতিক বাতাবরণে সে সব আর স্বীকার করে নেওয়ারও অবকাশ নেই।
তবে নেট দুনিয়ায় এক বার কিছু প্রকাশ্যে এলে তাকে আটকায় কার সাধ্য! সীমান্ত পেরোতে অসুবিধে হয়নি তাই ‘পাসুরি’র ।আসলে সঙ্গীত যে প্রাণের নির্যাস। রাজনৈতিক ক্ষত বোঝে না। ধর্মীয় হানাহানির পরোয়া করে না। ‘পাসুরি’-র মতো এক প্লাবন এসে আরও এক বার সদর্পে তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।