আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইমরান খানকে মুক্তির পর পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের রায় এবং আচরণের সাংবিধানিকতা নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। তবে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট যে দেশের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
পরাক্রমশালী এ প্রতিষ্ঠানটি দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এমনকি সরকারের শীর্সস্থানীয় পদ যেমন প্রধানমন্ত্রী অপসারণ, নির্বাচিত আইন প্রণেতাদের বাতিলসহ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সংসদীয় ও নির্বাহী ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষমতাও রয়েছে। সেনা-শাহজাজ সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেই শুধু মুক্তি নয়, ২০০৭ সালে পাকিস্তানের অভ্যুত্থানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
আর এই নিয়েই ভেতর ভেতর বরাবরই একটা চাপা গুঞ্জন চলে পাকিস্তানে। সুপ্রিমকোর্টের একমাত্র ক্ষমতা যদি রায় দেওয়ায় হয় তবে বর্তমান কোর্ট এতটা শক্তিশালী কীভাবে ঘুরেফিরে এই এক প্রশ্ন এখন আতশবাজির মতো ফুটছে পাকিস্তানের অলি-গলিতে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৭-২০০৯ সালের আইনজীবী/ বিচারিক আন্দোলন বর্তমান সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতার অনুঘটক বলা যেতে পারে।
পরিবর্তনের সূচক হিসাবে বিচারক: পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের রায়, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদালত শুধু নিষ্ক্রিয় থেকে নিজেদের বিচারকার্য সম্পাদন করছেন না। পাকিস্তানি আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করছেন হাইকোর্ট। এটি রাষ্ট্রের আরেকটি অঙ্গ। একটি সংস্কারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর উপলব্ধি তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
প্রথমত, আইনজীবী বা বিচারক আন্দোলন পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি বিপ্লবী মুহূর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিমকোর্ট রায়গুলোতে জনগণের ইচ্ছার ওপর বারবার নির্ভরতার উদ্দেশ্য হলো বিচারিক সংস্কারে নিজেদের ভূমিকাকে প্রমাণিত করা। তৃতীয়ত, সাবেক বিচারপতি জাওয়াদ এস খাজা অবমাননা আইন ২০১২-এ বিচারিক সংস্কারের ভূমিকা ইতিহাসে ‘স্বাভাবিক’ হতে পারে বলে যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করেন।
সাংবিধানিক থেকে জনপ্রিয় বৈধতা: হাইকোর্টের ২০০৭ সালে ৯ মার্চ এবং ৩ নভেম্বর বিচারপতিদের অসাংবিধানিক অপসারণের বার্তাটি সহজ ছিল। সিদ্ধান্তটির পক্ষে যুক্তি ছিল-নিছক সাংবিধানিক বৈধতা বিচারিক স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে না।
বিচারিক কৌশল: পাকিস্তানে রাষ্ট্র ও সমাজের নৈরাজ্য এবং ভাঙনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট শুরু থেকেই নিজেকে একটি কার্যকরী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এখনো রাষ্ট্র ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে জটিল সমস্যাগুলো আইনি যৌক্তিকতা ও বিচারিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
দক্ষ নেতৃত্ব তৎকালীন পাকিস্তান যখন একজন দক্ষ নেতৃত্বের অভাব অনুভব করছিল তখন নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করেন পাকিস্তান হাইকোর্ট। ‘রক্ষক’ হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের অবদানকে অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই।
আন্তঃরাজ্য দ্বন্দ্ব: একজন দুর্বল সরকার, সামরিক বাহিনী, বিরোধীদলের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের উপস্থিতিতে বিচার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সাংবিধানভাবে বিচার বিভাগ আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের বিচারক হিসাবে আবির্ভূত হয়।
মিডিয়ার মাধ্যমে খ্যাতি: বিংশ এবং একুশ দশকে মিডিয়ার মাধ্যমে খ্যাতির প্রচলন খুব বেড়ে যায়। খ্যাতিই শক্তি, পাকিস্তানি হাইকোর্ট শক্তিশালী কারণ এটি বিখ্যাত। খ্যাতি অর্জনের জন্য পাকিস্তানের হাইকোর্ট তার রায় এবং আদালতের কার্যক্রম মৌখিকভাবে/প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। জনগণেরও নিজেদের কল্পনা ও সমর্থনের সুযোগ দেন।
পাকিস্তানি সুপ্রিমকোর্ট মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে ভয় না করে বরং বিচারিক ক্ষমতায় জনসাধারণের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।