আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি হামলার জের ধরে বিগত মাসগুলোতে কোমল পানীয় কোকাকোলা এবং পেপসি বয়কট শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুটি পণ্যের সঙ্গে ইসরায়েলি মালিকানার সংযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ওই দুটি পানীয়র বিকল্প হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলা নামে আরেকটি পানীয় বাজারে নিয়ে আসেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত সুইডিশ তিন ভাই। সময়োপযোগী ওই সিদ্ধান্তে পানীয়টি বাজারে আসার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই বিপুল লাভের মুখ দেখলেন তাঁরা।
রোববার দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যালেস্টাইন কোলার চাহিদা এখন তুঙ্গে। বর্তমানে ইউরোপেও অসংখ্য রেস্তোরাঁ মার্কিন মালিকানাধীন পণ্য এড়িয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ক্যান প্যালেস্টাইন কোলা বিক্রি হয়েছে।
মাত্র ৬ মাস আগেই পেপসি ও কোকাকোলার বিকল্প হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলা বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছিলেন সুইডেনের মালমোতে বসবাস করা তিন ভাই—হোসেইন, মোহাম্মেদ এবং আহমাদ হাসোন। তাঁরা তিনজনই ছিলেন সফল ব্যবসায়ী।
নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ স্বাগত জানিয়েছিলেন। এর ফলে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য কোম্পানি এই পানীয়টি মজুত করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে।
প্যালেস্টাইন কোলার ক্যানের নকশাটিও বেশ প্রশংসা কুড়ায়। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক প্রতীক জলপাইয়ের ডাল এবং কেফিয়াহর নকশা দেখা যায়। আর ‘সবার জন্য স্বাধীনতা’—এমন একটি বার্তা লেখা আছে ক্যানটিতে।
হাসোন ভাইদের লক্ষ্য ফিলিস্তিন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করার জন্য দাতব্য সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়ানো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবি ভাষায় হুসেন হাসোন জানান, তাঁরা গাজার শিশুদের ওপর বিশেষ মনোযোগ রেখে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগের সঙ্গে একটি দাতব্য সংস্থা জড়িত। দুজন নিবেদিতপ্রাণ আইনজীবীর দ্বারা এই সংস্থাটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো—ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের কাছে, বিশেষ করে গাজার বাসিন্দাদের কাছে সরাসরি তহবিল সরবরাহ করা।
এ ছাড়াও যে কোম্পানির অধীনে প্যালেস্টাইন কোলা তৈরি হচ্ছে সেই সাফাদ ফুডের নামে সুইডেনে সাফাদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে হাসোন পরিবার। এই কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিল ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রকল্পে দান করা হবে।
সাফাদ ফুডের নামকরণ করা হয়েছে বর্তমানে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত টাইবেরিয়াস হ্রদের উত্তরে অবস্থিত একটি শহরের নামানুসারে। সেখান থেকেই হাসোন ভাইদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৪৮ সালে লেবাননে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে লেবানন থেকে বহিষ্কার করা হলে তাঁরা সুইডেনে গিয়ে স্থায়ী হন। এরই ধারাবাহিকতায় প্যালেস্টাইন কোলার প্রতিষ্ঠাতা তিন ভাইয়েরই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সুইডেনে। প্রায় ২৫ বছর আগে গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। এক সময় তাঁরা রিয়েল-এস্টেট ব্যবসায়ও মনোযোগ দেন এবং সাফল্য অর্জন করেন।
পানীয় ব্যবসায় ওই তিন ভাই প্রথম পণ্য হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ তাঁরা এমন কিছু উৎপাদন শুরু করতে চেয়েছিল যা দিয়ে প্রচুর লাভ করা সম্ভব।
সাফাদ ফুডের যোগাযোগ পরিচালক মোহম্মদ কিসওয়ানি দ্য ন্যাশনালকে জানান, পানীয় তৈরির উদ্যোগটি নিয়েছিলেন বড় ভাই হোসেন। তিনি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং দোকানে প্রধান ব্র্যান্ড পেপসি এবং কোকাকোলার বিকল্প না থাকার বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন। আরেকটি বিষয় হলো—সাম্প্রতিক গাজা ইস্যুতে সুইডেন এবং ইউরোপের অনেক রেস্তোরাঁই এই পানীয়গুলো বিক্রি না করার উপায় খুঁজছিল। কারণ এই পণ্যগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলি যোগসূত্র রয়েছে।
দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর বিশ্বজুড়ে পানীয়র বেশ কিছু ছোট ছোট ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে লেবাননে জাল্লৌল এবং জি কোলা স্থানীয়দের কাছে আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিশরে স্পিরো স্পাথিস নামে একটি পানীয়র বিক্রি ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাংলাদেশে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি তাদের পানীয় মোজো কোলার বিক্রির একটি অংশ ফিলিস্তিনের তহবিলে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে মোজো কোলার বিক্রি ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।