বিনোদন ডেস্ক : পাকিস্তানের লাহোরের নিষিদ্ধপল্লী থেকে উঠে আসা এক নারী নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রম দিয়ে ষাট ও সত্তরের দশকে পাক চলচ্চিত্র অঙ্গনে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নার্গিস বেগম—এক সময়কার সবচেয়ে আলোচিত এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন। কিন্তু তার জীবন ছিল তীব্র চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। শেষমেশ নিজের মায়ের ষড়যন্ত্রেই স্বামীর হাতে প্রাণ হারান এই অভিনেত্রী।
Table of Contents
এই মৃত্যু আজও পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে আছে। নার্গিস বেগমের জীবনের যাত্রাপথ দীর্ঘ না হলেও তার প্রভাব ছিল অগাধ।
লাহোরের হীরামাণ্ডি থেকে অভিনয় জগতে প্রবেশ
নার্গিস বেগম জন্মগ্রহণ করেন পাকিস্তানের লাহোরে। তার মা ছিলেন একজন যৌনকর্মী ও দক্ষ নৃত্যশিল্পী। শৈশব থেকেই নাচ ও গানে পারদর্শিতা অর্জন করেন নার্গিস। মুজরাতেও তার দখল ছিল অসাধারণ।
একটি আসরে পারফর্ম করতে গিয়ে এক চলচ্চিত্র প্রযোজকের নজরে পড়েন তিনি। এরপর শুরু হয় তার অভিনয় জীবনের পথচলা। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘ইশরাত’।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে নার্গিস
অল্প সময়ের মধ্যেই নার্গিস শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন। অধিকাংশ সিনেমায় তিনি আইটেম গানে অংশ নিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। সে সময়কার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া আইটেম কন্যা হিসেবে পরিচিত হন তিনি।
১৯৭১ সালে ‘কাসু’ সিনেমার শুটিং চলাকালীন প্রযোজক খাজা মাজহার-এর সঙ্গে প্রেমে জড়ান এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেন।
বিবাহিত জীবনের সংকট ও মায়ের ষড়যন্ত্র
বিয়ের পর নার্গিস স্বামীর বাড়িতে বসবাস শুরু করলেও বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তার মা। কারণ নার্গিসই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মা চাননি মেয়েটি অভিনয় বা পুরোনো পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাক।
মায়ের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অসুস্থতার অভিনয় করে মেয়েকে আবার হীরামাণ্ডির অন্ধকার গলিতে ফিরিয়ে আনেন। নার্গিস মায়ের অবস্থার কথা ভেবে সেখানে গিয়ে অবস্থান নিতে বাধ্য হন।
নার্গিস বেগমের করুণ পরিণতি
এক সময় স্বামী মাজহার নার্গিসের কোঠায় যান এবং তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু নার্গিস অনিচ্ছা প্রকাশ করলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। উত্তপ্ত বাক্যে রাগে ফেটে পড়ে মাজহার এবং গুলি করেন নার্গিসকে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নার্গিস বেগম। এ ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হন—নার্গিসের চাচা ও দুইজন মিউজিশিয়ান।
ঘটনাটি আদালতে গড়ালে খাজা মাজহারকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
খুনি কে—স্বামী না মা?
নার্গিস বেগমের মৃত্যু ঘিরে আজও বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন স্বামী খুনি, আবার কেউ মনে করেন মা-ই মূল ষড়যন্ত্রকারিণী। তিনি ঘর-সংসার চেয়েছিলেন, কিছু সময়ের জন্য তা পেয়েওছিলেন। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কিছুই।
হীরামাণ্ডি সিরিজে জীবনের প্রতিফলন
সম্প্রতি বলিউড নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালি তার প্রথম ওটিটি সিরিজ ‘হীরামাণ্ডি’ নির্মাণ করেন, যা মূলত যৌনকর্মীদের জীবন নিয়ে তৈরি। অনেকেই মনে করেন, এই সিরিজের পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন নার্গিস বেগম নিজেই।
‘হীরামাণ্ডি’ সিরিজটি দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং নার্গিস বেগমের জীবনের করুণ ইতিহাস নতুন করে সামনে আসে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।