বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ পঞ্চায়েত এর সিজন ৩। হালকা পাতলা কমেডি দিয়ে সিজন ওয়ান শুরু করার পরে সিজন ২ এর শেষে গিয়ে এই সিরিজের ঘটনাপ্রবাহ অনেকটাই সিরিয়াস দেখানো হয়েছে। তারপর প্রায় ৩ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ করে এবার এল এই ওয়েব সিরিজের তৃতীয় অধ্যায়।
যেখানে দেখানো হয়েছে। সচিব কি আবার ফিরেছেন প্রাণের ফুলেরা গ্রামে। প্রল্লাদের ছেলে কাশ্মীরে শহীদ হওয়ার পরে প্রল্লাদ চাচার জীবন এখন কেমন কাটছে। সচিব ও রিংকির প্রেম কি আর এগিয়েছে। বিধায়াক কিভাবে গ্রাম প্রধানের সাথে বদলা নেবে। পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে গ্রামে কি ঘটছে এইসব ঘটনাবলী।
পঞ্চায়েতের সিজন ১ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই ওয়েব সিরিজটি অন্যান্য ওয়েব সিরিজ থেকে বিভিন্ন কারণেই আলাদা।
আজকে তাই জানাবো কেমন লাগলো পঞ্চায়েতের সিজন ৩। এবং কেনো পাঞ্চায়াত ইন্ডিয়াতে সবচেয়ে সেরা ওয়েব সিরিজগুলর মাঝে অন্যতম।
১. প্লট: পাঞ্চায়েত ওয়েব সিরিজের সবচেয়ে বড় ক্রিস্প হচ্ছে এইটার প্লট। গ্রামীন ফিল যেটা সিরিজে পাওয়া যায়। যার কারণে মনে হচ্ছিল, আমি এই গ্রামের কেউ। গ্রামের উঁচু টাংকি, প্রধানের বাড়ি, গ্রামের রাস্তা, দাদিমার ঝুপড়ি, গ্রামের ধুলা, প্রল্লাদের খালি বাড়ি, পাঞ্চায়েত অফিস। প্রতিটা স্থান নিজেই একটা একটা গল্প বলছে। খুব সিম্পল প্লটে বলে যাওয়া একটা গল্প একটা সময় নিজের গল্পই মনে হয়। আমাদের জীবনেও এমন সাধারণ সমস্যাগুলোই বড় সমস্যা। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের জীবনের সমস্যাই সাধারণ। এ কারণে এই মুভির প্লট অন্য মুভি থেকে আলাদা। আমাদের মনে থেকে যায়। পঞ্চায়েত সিজন ৩ এর গল্পও একই পথ ধরে এগিয়েছে। এপিসোড ৩/৪ এ আমাদের কাঁদিয়েছে। তারপর কিছুটা হাসিয়েছে। সবশেষে আমাদের মনের মাঝে একটা প্রশ্ন বা সাসপেন্স রেখে আপাতত সিরিজের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।
২. কারেক্টার: এই সিরিজের সব কারেক্টার গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজে এমন কোন কারেক্টার নেই যেটা মনে হবে স্ক্রিনটাইম বাড়াচ্ছে। সচিব জি, প্রধান, প্রধানের স্ত্রী, রিংকি, চান্দান, প্রল্লাদ, বিনোদ, বিধায়াক, বানরাক্ষস, এমন কি ছোট ছোট কারেক্টার নিয়েও যারা এসেছে তারাও মন ছুয়ে গেছে। এমনকি লাউ, বাশ, চেয়ার, লাইট, হুন্ডা প্রতিটা অবজেক্ট ও আলাদা করে গল্প বলে। এক্ষেত্রে অবজেক্টগুলোও একটা কারেক্টার হিসেবে সিরিজটিতে স্থান পেয়েছে। এটা একটা বড় কারণ এ সিরিজটি সবার মন ছুয়ে যাওয়ার। এবারের সিজনে আগের কারেক্টারগুলো ছাড়াও নতুন কিছু কারেক্টার এর সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। যেটা ভালোই লাগবে।
৩. অভিনয়: পঞ্চায়েত এর প্রতিটা অভিনেতার অভিনয় ন্যাচারাল। ওভার দ্যা টপ কিছু করার চেষ্টা ছিল না কারোর মাঝেই। মনে হবে এটাই তো সাধারণ। আমরাও তো এভাবে কথা বলি। আমরাও তো এভাবে উঠে বসি। এভাবে আড্ডা দেই। এভাবে ঝামেলাগুলোর সাথে লড়াই করি। এ কারণে এই সিরিজের অভিনেতাদের অভিনয় ও তাদের কার্যকলাপ যে কারও ভালো লাগতে বাধ্য।
৪. ডায়লগ: দেখ রাহে হে বিনোদ, গাজাব বেজ্জাতি হ্যায়। সামায় স্যা পেহলি কোয়ি নেহি জায়েগা, কোয়ি ন্যাহি মাতলাব কোয়ি নাহি, হাম ইয়াহি হাগেংগে, সোনা বেচকার কোয়ি পাত্থার খারিদতাহে ক্যা মা জি। এ মুভিতে বলা ডায়লগগুলো খুব বেশি মেলোড্রামাটিক না। খুব সাধারণ কিন্তু মনে রাখার মতো। কোন ডায়লগেই জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়নি। এমনকি কোন ডায়লগ জোর করেও ঢুকিয়ে দেয়া হয়নি। একারণে বলাই যায়, এ সিরিজের অন্যতম প্রাণ সিরিজের ডায়লগ। এ সিরিজে কিছু ডায়লগ আপনাকে কাঁদাবে। আবার কিছু ডায়লগ আপনাকে হাসাবে। সব মিলিয়ে সিরিজের ডায়লগ আপনাকে সিরিজ দেখতে গিয়ে প্রাণবন্ত করে তুলবে।
৫. গল্প বলার ধরণ: সাধারণত আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা। ছোট খাটো চিন্তা সবসময়ই আমাদের মাথায় থাকে। কারও হয়তো পরিবার নিয়ে চিন্তা আবার কারও হয়তো আরও বড় কোন চিন্তা। এ চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আমরা আশ্রয় নেই এন্টারটেইনমেন্ট এর। কিন্তু বর্তমান সময়ে সাসপেন্স থ্রিলার, পরকীয়া, রোমান্টিক জনরার মুভি দেখলে মাথায় চিন্তামুক্তি তো দূরের কথা আরও বেশি চিন্তা এসে পরে। এক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ওয়েব সিরিজটা দেখিয়েছে হাসতে হাসতে কিভাবে আমরা আমাদের জীবনে ছোট ছোট সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি। সিচ্যুয়েশনার কমেডির মাধ্যমে আমরা আনন্দ দেয়া এ সিরিজটির অন্যতম দিক। এ সিরিজে দেশ, রাজনীতি কিংবা সমাজ নিয়ে বড় কোন বক্তব্য বা জোর করে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হয়নি। তবে যেটা করা হয়েছে খুব সাধারণ ভঙ্গিতে নারী শিক্ষা, পরিস্কার টয়লেট, গ্রাম্য রাজনীতি, প্রতারণা, ভালোবাসা, ঐক্য এসব কিছুই দেখানো হয়েছে। যেটা সত্যিই আমাদের মনে একটা চিন্তার সৃষ্টি ঘটায়। এ সিজনেও এই সিরিজ একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। তবে আগের ২ সিজন থেকে এবার কমেডিটা একটু কম রেখে রাজনীতির দিকটা বেশি ফোকাস করার চেষ্টা করেছে এই ওয়েব সিরিজ।
৬. মিউজিক: না এই সিরিজে ধুমধারাক্কা কোন আইটেম গান কিংবা বলিউডি ধাঁচের কোন গান নেই। তবে এখানে প্রতিটা সিনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার করেছে সেটা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
সবশেষে সিজন ৩ এ মোট ৮ টা এপিসোড আছে। যেগুলোর দৈর্ঘ্য ৩৫ মিনিট থেকে ৪২/৪৩ মিনিট। এই সিরিজটা আপনাকে কোনভাবেই বোরিং ফিল দেবে না। সবশেষে এই সিরিজের সাথে আপনার সময়টা মনে থাকবে। একটা সুন্দর আবহ নিয়ে সিরিজটা শেষ করতে পারবেন। যেটা বলা যায় সিরিজ দেখার অনেক পরেও আপনার মাঝে থাকবে। তবে হ্যা এই সিরিজ শেষ হওয়ার পরে আপনার অপেক্ষা করতে হবে সিজন ৪ এর জন্য।
সবশেষে এই সিজনকে রেটিং দিলে ৫ এ আরামেই ৪.৭ দেয়াই যায়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।