জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ পাশ্ববর্তী সাত উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও সংরক্ষণের অভাবে কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ ফুলবাড়ীসহ সাত উপজেলায় রয়েছে মাত্র একটা হিমাগার। ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ নামের এই হিমাগারে সংরক্ষণের জায়গা সংকুলান না থাকায় লোকসানের মুখে পড়তে বসেছেন আলু চাষিরা। বাধ্য হয়ে পানির দরে আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর দক্ষিণাঞ্চলের ফুলবাড়ী উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট, পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলার ১০ হাজারেরও বেশি আলুচাষি প্রতি বছর তাদের উৎপাদিত আলু ও আলু বীজ সংরক্ষণের জন্য রয়েছে একটি মাত্র হিমাগার।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষিরা আলু চাষ করেছেন ১৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন আলু, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
উপজেলাভিত্তিক আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ফুলবাড়িতে এক হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে দুই হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। চিরিরবন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৭০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে তিন হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। বিরামপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯৮০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে দুই হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। নবাবগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪৯ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে এক হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। হাকিমপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ৯০৫ হেক্টর জমিতে। ঘোড়াঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬৫০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে এক হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। পার্বতীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৯৭৬ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে চার হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছেন তিন লাখ ৩০ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন আলু। এই সাত উপজেলার মধ্যে হিমাগার আছে মাত্র একটি। আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে ৬০ কেজি ওজনের এক লাখ ৫৬ হাজার বস্তা।
ফুলবাড়ী উপজেলা গোপালপুর গ্রামের আলু চাষি আমিনুল ইসলাম ও লালপুর পাঠকপাড়া গ্রামের মনছুর আলী বলেন, গত বছর আলুর চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে আলুর দাম আশানুরূপ থাকলেও পরে দাম পড়ে গেছে।
হিমাগারে আলু ও আলু বীজ সংরক্ষণ করা গেলে পারলে আগামীতে ভালো দাম পাওয়া যেত। হিমাগারে জায়গা না থাকায় কৃষকরা বাধ্য হয়েই তাদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।
রাজারামপুর গ্রামের আলু চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক চেষ্টা করে হিমাগারে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে ঢোকাতে পেরেছি। অনেক কৃষক তাও পারেননি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার রুম্মান আক্তার জানান, আলু চাষিদের নানা রকম সুযোগ সুবিধা দেয়া এবং স্থানীয় হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করার ব্যাপারে এলাকার কৃষকদের অগ্রধিকার দেয়ার বিষয়টি এবার বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার বলেন, হিমাগারে এক লাখ ৫৬ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতার পুরোটাই ভরে গেছে। হিমাগারে প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হলেও চাষিরা আলু নিয়ে এখানে চলে আসছেন এবং ভিড় করছেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষকদের আলু বেশি সংরক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।