বিনোদন ডেস্ক : চাঁদা দাবি, প্রাণনাশের হুমকিসহ বেশকিছু অভিযোগে কথিত চলচ্চিত্র প্রযোজক রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) আদালতে মামলা করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। মামলায় রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। আগামী ২৪ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিনও ধার্য করা হয়েছে।
মামলায় শাকিব খান উল্লেখ করেছেন, বাদী শাকিব খান রানা বাংলাদেশের তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক। বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য দর্শকনন্দিত বাংলা সিনেমা উপহার দিয়ে দুই বাংলার অসংখ্য মানুষকে চিত্ত-বিনোদন দিয়ে আসছেন। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পর পর দুইবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতে উক্ত বাদীর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারবার দেশ-বিদেশে পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্যবার পুরস্কৃত হয়েছেন।
তিনি (শাকিব) বাংলাদেশের অনেকগুলো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের দেশ-বিদেশে সুনাম বৃদ্ধির জন্য ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানেও কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অর্জন দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে, আসামি একজন ঠগ, প্রতারক, ভুয়া প্রযোজক এবং বিদেশের মাটিতে চাঁদাবাজ বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্নকারী, পরনিন্দাকারী, অন্যের কুৎসা রটনাকারী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি।
বাদী ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ভারটেক্স মিডিয়া’র স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি মোতাবেক ছবির নায়িকা হিসাবে বাদীর বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়।
ছবির শুটিংয়ের জন্য বাদী ২০১৬ সালের আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর বাদী জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার বদলে অ্যানি সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে ছবির নায়িকা হিসাবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য আসামি রহমতউল্লাহ বাদীকে অনুরোধ করেন। বাদী তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে সবিনয়ে নাকচ করে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
মামলার বাদী অত্যন্ত সহজ-সরল, তাই উক্ত ঘটনা বাদীর মনে না থাকলেও আসামি বাদীকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা প্রণয়ন করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বাদী রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামি-দামি ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। বাদী সরল বিশ্বাসে আসামির প্রস্তাবে রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি সাবরিনসহ আরও ২-৩ জন অপরিচিত লোককে দেখতে পান।
বাদী অত্র মামলার আসামিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন। একপর্যায়ে বাদী অসুস্থবোধ করলে তিনি হোটেলে ফেরত আসার সময় আসামি এবং অন্য ২-৩ জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি সাবরিনের কাছ থেকে বিদায় নিতে যান। গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে সাবরিন বাদীকে বলেন, ‘আপনি চলেন, অসুস্থবোধ করছেন যেহেতু, আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ বাদী অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে বাদী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
ওই ঘটনার পরদিন সকাল বেলা মামলার আসামি বাদীকে ফোনে জানান যে, ‘তুমি রাতে উক্ত নারীর সঙ্গে কী করেছ? সব কিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে ১ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহেল আমি সমস্ত ভিডিও ক্লিপ এবং অ্যানি সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছ গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’
এইরকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায়ে তখন বাদী ভয় পেয়ে যান। বাদী তখন ভাবেন যে, ‘যেহেতু আমি অজ্ঞান ছিলাম সেহেতু তারা আমার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বাদী ভয়ে তখন আসামিকে বলেন, ‘আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেব কীভাবে?’ আসামি তখন প্রতি-উত্তরে বলেন, ‘বড়লোক, তোমার অনেক টাকা আছে। টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও। যদি আমার দাবিকৃত ডলার পরিশোধ না কর, তাহলে সমস্ত ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করব। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তখন বাদী তার ব্যক্তিগত জীবনের ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে ভয় পেয়ে আসামিকে ৫ হাজার ৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেন। তারপর আসামি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখালে এই পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় সর্বমোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসাবে দিয়েছেন বাদী। আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে বাদীর কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় বাদীকে জানানো হয় যে, ‘তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে।’
পরবর্তীতে বাদী পুনরায় ২০১৮ সালে উক্ত ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় গেলে অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তদন্ত করে। বাদীর কোনো অপরাধের প্রমাণ না পেয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে জানায় যে, ‘মিস্টার খান, এটি একটি হানি ট্রাপ। আপনি এদের থেকে দূরে থাকুন।’
তখন বাদী বুঝতে পারেন আসামি বাদীকে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তারপর থেকে বাদী আসামিকে চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমতউল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বাদীর পরিবারের সদস্যদের কাছে বাদীর নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।
সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে উক্ত ঘটনায় মিমাংসার কথা বলে ঢাকার গুলশানস্থ স্প্যারো নামক একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে অত্র আসামি বাদীর কাছে ১ লাখ ডলার পুনরায় চাঁদা দাবি করেন। আসামি বলেন যে, ‘যদি উক্ত ১ লাখ ডলার চাঁদা না দিস তাহলে তোর মাথা আর ঘাঁড়ে থাকবে না এবং তোর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেব’ বলে হুমকি দেন। ফলে বাদী এখন এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আসামি বাদীর কাছে গত ১৬ মার্চ ১ লাখ ডলার চাঁদা দাবিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৫০৬ (২) ধারায় সুস্পষ্ট অপরাধ সংঘটন করেছেন। অত্র বাদী নিরুপায় হয়ে বগত ২০ মার্চ গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে মামলা করার পরামর্শ প্রদান করলে বাদী বাধ্য হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করলেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগে রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন শাকিব খান।
আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘থানা থেকে যে পরামর্শ দিয়েছিল, আমি অলরেডি চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছি। দু-একদিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি ন্যায়বিচার পাব।’
শাকিব খানের আইনজীবী মো. খায়রুল হাসান জানান, পেনাল কোডের ৩৮৫ ও ৫০৬ ধারায় চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকির মামলা করেছেন শাকিব খান। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। অভিযুক্ত রহমতউল্লাহকে তলব এবং আগামী ২৪ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এদিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালতে যান শাকিব খান।
গত শনিবার (১৮ মার্চ) রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজধানীর গুলশান থানায় হাজির হয়েছিলেন শাকিব খান। তবে থানা শাকিবের মামলা নেয়নি। থানা থেকে আদালতে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়।
পরে রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে যান তিনি। সেখানে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে পাঁচঘণ্টা আলোচনা করেন শাকিব।
দীর্ঘ এ আলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রযোজক নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাই ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাই গুলশান থানায়। কিন্তু গুলশান থানার ওসি আমার মামলা নেননি। অনেক চেষ্টা এবং অনেক বোঝানোর পরও তিনি মামলা নিলেন না। এরপর তিনি বললেন, আপনি যেখানে খুশি গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘একজন ভুয়া প্রযোজক কীভাবে আমার নামে এসব অভিযোগ করেন? তিনি তো এই সিনেমার প্রযোজক না। তাই আমি দ্রুত তার বিষয়ে খবর নিয়ে মামলা করতে যাই। আমি জানতে পারি তিনি দু-এক দিনের মধ্যে দেশ ছাড়বেন।’
এদিকে গণমাধ্যমে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ এনে শাকিব খানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন রহমতউল্লাহ। তিন দিনের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে ঢালিউড অভিনেতাকে।
নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিগ্যাল নোটিশের ছবি পোস্ট করেছেন রহমতউল্লাহ। তার পক্ষে শাকিব খানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে রহমতউল্লার আইনজীবী ড. মো. তবারক হোসেন ভূঁইয়া। গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত ৮টার দিকে লিগ্যাল নোটিশটি গ্রহণ করেছেন প্রাপক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।