বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মানবজাতির ইতিহাসে লেখন পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর বা এরও আগে। এর বহু আগে থেকেই অবশ্য মানুষ নানা ধরনের শিল্প তৈরি করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আঁকাআঁকির ইচ্ছা উল্লেখযোগ্যভাবে বিবর্তিত হয়েছে। বিচিত্র সব মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি করা হলেও এখন পর্যন্ত পানিতে ক্যালিগ্রাফি করার কোনো কৌশল বের হয়নি।
পানির অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে কালি চারপাশে ছড়িয়ে যায়, ফলে ক্যালিগ্রাফির নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলা যায় না। পানি এবং অন্যান্য তরলে আঁকা সম্ভব করা মানে হলো, ভবিষ্যতে লেখালেখিতে আরও অনেক বিবর্তনের সুযোগ তৈরি করা।
এরই সমাধান হিসেবে বিশেষ ‘এক কলম’ উদ্ভাবন করেছেন জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি (জেজিইউ) ও টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডামশাদ এবং চীনের হুয়াঝং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা। শিগগিরই বিশেষ এ কলম ব্যবহার করে শিল্পীরা নতুন এক মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স অ্যালার্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন এ ডিভাইসটি হলো ৫০ মাইক্রন ব্যাসের একটি বল। এটি বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি, যা তরলের সঙ্গে আয়ন বিনিময় করে তুলনামূলক কম পিএইচের অর্থাৎ অম্লীয় একটি এলাকা তৈরি করে। পানিতে বিদ্যমান কণাগুলো ওই অম্লীয় ক্ষেত্রতে জমা হতে থাকে। এমন ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করে স্থির লেখনীর আকার দেওয়া সম্ভব।
পানিতে লেখা স্থির রাখার জন্য প্রোটোটাইপ বলটিকে পানির আশপাশে ঘোরানোর পরিবর্তে পানির পাত্রটিকেই বলের আশপাশে ঘোরানো হয়। প্রথমে হাতেই পানির পাত্র ঘোরানো হলেও পরে একটি কম্পিউটার চালিত রকার ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
জেজিইউর পদার্থবিজ্ঞানী থমাস পালবার্গ বলেন, ‘আমরা এক ইউরো মুদ্রার (কয়েন) সমান একটি পানির পাত্রে ১৮ পয়েন্ট ফন্টে ইংরেজি আই (i) অক্ষরের সমান একটি অবয়ব তৈরি করতে পেরেছি। এরপর আমরা তা মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে দেখেছি। তবে, আমরা এখনো একবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছি।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কলমটির আণুবীক্ষণিক আকার এবং কলমের আশপাশে পানি ঘোরানোর ব্যাপারটি তরলকে যথাসম্ভব স্থির রাখে। এ উপায়ে টানা রেখাগুলো ১৫ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকে। এ সময়ের মধ্যে আলো–ভিত্তিক কৌশল ব্যবহার করে আয়ন বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট আকারের রেখা টানা সম্ভব।
এর অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া জানার জন্য গবেষক দলটি মূল ব্যবহারিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়াও কয়েকটি তাত্ত্বিক মডেল নিয়েও কাজ করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, এ কৌশল ব্যবহার করে অন্যান্য কলম দিয়েও পানিতে লেখা যাবে। যেমন—যে কলমগুলো লেজার দিয়ে গরম করা যায় সেগুলো পানিতে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডামশাদের পদার্থবিজ্ঞানী বেনো লিবচেন বলেন, ‘এ কৌশল ব্যবহার করে পানিতে বিস্তৃত সমান্তরাল আকার তৈরি করে লেখা সম্ভব হবে। তরলের মধ্যে উচ্চতর জটিল ঘনত্বের প্যাটার্ন তৈরির ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে।’
গবেষকেরা বলছেন, এ প্রযুক্তি এখনো বেশ নতুন। তবে, তরলে বিদ্যমান রাসায়নিক কণা ব্যবহার করে নতুন ধরনের শিল্প তৈরির জন্য এ প্রযুক্তি বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই উদ্ভাবন এমনকি অত্যন্ত সূক্ষ্ম আকারে লেখালেখির এক নতুন বহুমুখী কৌশল এবং তরলের প্যাটার্ন তৈরির দ্বার উন্মোচন করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।