লাইফস্টাইল ডেস্ক : পাপ তথা আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করা মানবজীবনের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক। কারণ এর ফলে বান্দা দুনিয়া ও আখিরাতে নানা অকল্যাণ, অনিষ্ট ও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাই পাপের অশুভ পরিণতির কথা আমাদের সর্বদা স্মরণে রাখতে হবে। আজকের লেখায় পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ভয়াবহ কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।
১. পাপের কারণে অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়
পাপের কারণে অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। পাপ যত বেশি হবে, অন্তরে কালো দাগ তত বৃদ্ধি পাবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘পুণ্য হচ্ছে মুখমণ্ডলের লাবণ্য, অন্তরের জ্যোতি, জীবিকার প্রশস্ততা, দেহের শক্তি এবং সৃষ্টির হৃদয়ে মহব্বতের কারণ। আর পাপ হচ্ছে মুখমণ্ডলে কালিমা, অন্তরের অন্ধকার, জীবিকার সংকোচন এবং স্রষ্টার হৃদয়ে অসন্তোষের কারণ।’ (আমরাজুল কুলুব ওয়া শিফাউহা, পৃষ্ঠা-৭)
২. লজ্জাশীলতা দুর্বল করে দেয়
পাপাচার বান্দার লজ্জাশীলতা দুর্বল করে দেয়। ফলে তার নিকৃষ্টাবস্থা মানুষের গোচরে এলে এবং তার পাপাচার জনগণ দেখে ফেললেও তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর তৈরি হয় না। এমনকি পাপাচারে লিপ্ত হতে সে আল্লাহকেও ভয় পায় না এবং মানুষকেও লজ্জা করে না। মন যখন যা চায় তা-ই সে করে। তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নবীদের বার্তা, যা মানবজাতি লাভ করেছে, তার মধ্যে একটি হলো, যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮৩-৮৪)
৩. পাপাচারে মানবহৃদয় অধঃপতিত হয়
গুনাহর কারণে মানবহৃদয় অধঃপতিত হয়। ফলে সে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি—মানুষের হৃদয়ে চাটাইয়ের পাতার (ছিলকার) মতো একটির পর একটি করে ক্রমান্বয়ে ফিতনার প্রাদুর্ভাব হবে। সুতরাং যে হৃদয়ে সে ফিতনা সঞ্চারিত হবে সে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে এবং যে হৃদয় তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করবে সে হৃদয়ে একটি সাদা দাগ অঙ্কিত হবে। পরিশেষে (সব মানুষের) হৃদয় দুই শ্রেণির হৃদয়ে পরিণত হবে। প্রথম শ্রেণির হৃদয় হবে মসৃণ পাথরের মতো সাদা; এমন হৃদয় আকাশ-পৃথিবী অবশিষ্ট থাকা অবধি কোনো ফিতনা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর দ্বিতীয় শ্রেণির হৃদয় হবে উপুড় করা কলসির মতো ছাই রঙের; এমন হৃদয় তার সঞ্চারিত ধারণা ছাড়া কোনো ভালোকে ভালো বলে জানবে না এবং মন্দকে মন্দ মনে করবে না (তার প্রতিবাদও করবে না)।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৪)
৪. ভালো কাজের তাওফিক হয় না
প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘নেক আমলের প্রতিদান হলো সেই আমলের পরে আরেকটি নেক আমল করতে পারা। আর পাপের পরিণাম হলো, সেই পাপের পরে আরেকটি পাপ করে ফেলা। কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কবুল করে নেন, তখন তাকে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দেন এবং তাকে পাপ থেকে দূরে রাখেন।’ (মিফতাহু দারিস সাআদাহ : ১/২৯৯) তাবেঈ উরওয়া ইবনে জুবাইর (রহ.) বলেন, ‘তুমি যদি কোনো ব্যক্তিকে নেক আমল করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, তার আরো নেক আমল আছে। আর যদি কোনো ব্যক্তিকে পাপ করতে দেখো, তাহলে বুঝে নিয়ো, তার আরো অনেক পাপ রয়েছে। কেননা একটি নেক আমল তার সমপর্যায়ের অন্য নেক আমলের প্রতি নির্দেশ করে এবং একটি পাপ অন্যান্য পাপের দিকে নির্দেশ করে।’ (হিলয়াতুল আওলিয়া : ২/১৭৭)
৫. অপমানের জীবন বহন করা
যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করে তাদের ওপর আল্লাহর অসন্তোষ আপতিত হয়। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে অপমানিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর বহু মানুষ আছে তাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে। আর আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মান দেওয়ার কেউ নেই।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)
৬. আল্লাহকে ভুলে যাওয়া
পাপী ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তিনি বান্দাকে ভুলে যান। কারণ পাপ করার অর্থ হলো আল্লাহকে ও তাঁর মাহাত্ম্যকে ভুলে যাওয়া। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই হলো অবাধ্য।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮-১৯) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তাদের ভুলে গেছেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৭)
৭. আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া
পাপাচার তথা আল্লাহর অবাধ্যতা তাঁর রহমত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যেসব বিপদ-আপদ হয়, তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক পাপই মার্জনা করে দেন।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৩০)
৮. রিজিক বন্ধ বা বরকত নষ্ট হয়
আল্লাহকে ভয় করলে এবং তাঁর বিধান মানলে তিনি অগণিত রিজিক দান করেন আর পাপাচারে লিপ্ত হলে রিজিক বন্ধ করে দেন কিংবা রিজিক বরকতহীন করে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক প্রদান করে থাকেন।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩) আল্লাহর বিধান অমান্য করলে দুনিয়াবি জীবন সংকীর্ণ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমার কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকুচিত।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪)
৯. রোগ-ব্যাধির বিস্তার
পাপের কারণে সমাজে নানা দুরারোগ্য ব্যাধির বিস্তার ঘটে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে যখন প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০৯)
১০. দুনিয়ার শাস্তি অবধারিত
সুলায়মান (রহ.) বলেন, জনৈক সাহাবি সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ব্যক্তিগত পাপাচার ব্যাপক না করা পর্যন্ত এবং তাদের কোনো ওজর পেশ করার সুযোগ থাকা পর্যন্ত তারা ধ্বংস হবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪৭) আল্লাহ আমাদের সব ধরনের পাপাচার থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।