জুমবাংলা ডেস্ক : পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন এসেছে। ধারণা করা হয়েছিল পদ্মা সেতু চালুর পর হয়তো এর বিরূপ প্রভাব পড়বে নৌপথে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পরও নৌপথে আগের মতোই লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকবে। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে নৌপথে যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে।
সঙ্গে বাড়বে লঞ্চও। ফলে নৌপথে লঞ্চ ব্যবসায় ভাটা পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
এরই অংশ হিসেবে আগামী এক বছরে পাঁচটি নতুন লঞ্চ নামানোর উদ্যোগ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। লঞ্চগুলো বর্তমানে নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে।
ঢাকা-কুয়াকাটা সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের পরও নৌপথে যাত্রী বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের মতে, প্রথমত নৌপথে ভাড়া কম। দ্বিতীয়ত লঞ্চে যাতায়াতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় না এবং যাত্রীরা ক্লান্তি বোধ করে না। তৃতীয়ত বর্তমানে বিলাসবহুল যেসব লঞ্চ তৈরি হচ্ছে, যাত্রীরা বাসের চেয়ে এসব লঞ্চে ভ্রমণে বেশি আগ্রহী।
আবার লঞ্চে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে লিফট এবং হাসপাতাল। বিলাসবহুল লঞ্চে যুক্ত হয়েছে ইকো-সাউন্ড প্রযুক্তি। এতে পানির গভীরতা বোঝা যায়। ফলে লঞ্চ চরে আটকে পড়ার ঝুঁকি কমেছে।
বিনিয়োগ বাড়ছে লঞ্চ ব্যবসায়
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রাচীন বাহন লঞ্চ। এ ব্যবসার উদ্যোক্তারা জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলে। বড় লঞ্চগুলো চলে ঢাকা-বরিশাল রুটে। এ রুটে ১৯৯০ সালের দিকে অ্যাটলাস সন, রাজহংস, দ্বীপরাজ এসব ছোট ছোট লঞ্চ চলত। এরপর সাগর নামে একটি বড় লঞ্চ এ পথে প্রথম চলাচল শুরু করে। এক দশক আগেও একটি লঞ্চ তৈরিতে ব্যয় হতো ছয় থেকে সাত কোটি টাকা। বর্তমানে লঞ্চের আকার যেমন বেড়েছে, বেড়েছে বিনিয়োগও। বর্তমানের বিলাসবহুল ও আধুনিক প্রযুক্তির বড় লঞ্চের যাত্রা শুরু ২০০০ সাল থেকে।
উদ্যোক্তারা জানান, নতুন করে নৌপথে লঞ্চ নামাচ্ছে পারাবত, কীর্তনখোলা, সুন্দরবন, সুরভি, এম খান, আগরপুর নেভিগেশনসহ কয়েকটি কম্পানি। বরিশাল শহরের চরআবদানী এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে সুন্দরবন ডকইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে নতুন লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১৬ ও সুন্দরবন-১৪।
সুন্দরবন ডকইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আধুনিক সুযোগ-সুবিধার এ দুটি লঞ্চ চলবে বরিশাল-ঢাকা পথে। ৩১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থের তিনতলা লঞ্চ দুটিতে রাখা হচ্ছে লিফট সুবিধা। আশা করছি জুলাই মাস থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করা যাবে। ’
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠিতে সুগন্ধা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে এমভি এম খান-৭। কোরবানির ঈদের পর সেখানে এম খান-১১ নামের আরেকটি লঞ্চের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এম খান গ্রুপের ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক তারেক রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বরিশালের লঞ্চ কম্পানিগুলোর অন্যতম সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক শহীদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘বর্তমানে একটি বড় লঞ্চ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। এ লঞ্চের মেয়াদ থাকে অন্তত ৩৫ বছর। লগ্নির পুরো অর্থ উঠতে সময় লাগে ১০ বছরের কম। দুই বছর পর পর লঞ্চের সংস্কার করতে হয়। যাত্রীদের আকর্ষণ বাড়াতে কমবেশি পাঁচ বছর পর সাজসজ্জা পরিবর্তন করতে হয়। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ব্যবসায় টিকে থাকতে কয়েক বছর পর পর নতুন লঞ্চ নামাতে হয়। সুন্দরবন ডকইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে নতুন লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১৬ ও সুন্দরবন-১৪।
ভাড়া কম, সুযোগ বেশি
ঢাকা-বরিশাল পথে লঞ্চে সাধারণ যাত্রীদের বর্তমানে ভাড়া ২৫০ টাকা। ঈদ মৌসুমে নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। একজন যাত্রীর ‘সিঙ্গেল’ কেবিনের ভাড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। আর দুজন যাত্রীর ‘ডাবল’ কেবিনের ভাড়া দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। বিজনেস ক্লাসের একটি কেবিনের ভাড়া সাত হাজার টাকা পর্যন্ত।
সুন্দরবন নেভিগেশনের মালিক ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকা নৌপথে প্রতিদিন কমবেশি ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। এর জন্য ২৫০ থেকে ৩০০টি বাস প্রয়োজন। দ্রুত এত বাস নামানো সম্ভব না। তবে ধীরে ধীরে বাস বাড়লেও যাত্রীরা লঞ্চে মালামাল বহনে যে সুবিধা পায়, বাসে তা পাবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।