জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি বছর কুষ্টিয়ায় পাটের আবাদ কমেছে। আশানুরূপ ফলনা না হওয়া, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ার পাশাপাশি পাট জাগ দেওয়ার খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় আবাদ কমেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
তারা বলছেন, এবার অধিকাংশ কৃষক ধান চাষ করেছেন। তবে পাট অধিদপ্তরের দাবি, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কমেছে পাটের আবাদ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, পাট চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে চাষিদের।
জেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় চলতি বছরে পাট চাষ হয়েছে ৮৬ হাজার একর জমিতে। অথচ পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার একর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৯ হাজার (৯০ হাজার বিঘা) একর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ একর। আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১৫ একর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৪ লাখ বেল পাট।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের কৃষক দাউদ আলী বলেন, আমি নিয়মিত পাট চাষ করতাম। পাট চাষে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পাট পচানো পানি আর শ্রমিকের অভাব থাকা সত্বেও পাঠ চাষ করতাম। এতো কিছুর পরেও ন্যায্যমূল্য পাইনি।
একই উপজেলার কাতলামারি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না পাট পচানোর জন্য। প্রচণ্ড রোদ ও গরমের কারণে মাঠেই পাট নষ্ট হয়েছে। অনেকেরই জমিতে পাট বের হয়নি। তাই এবার পাটের আবাদ কম হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া গ্রামের কৃষক মনছের আলী বলেন, পাট চাষ করলে বিপদে পড়তে হয়। পাট বিক্রি করে এখন খরচও উঠে না। আর পাট জাগ দেওয়ার পানি নেই খাল-বিলে। এজন্য পাটের আবাদ কমছে। অনেক কৃষকই এখন পাটের বদলে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন।
একই গ্রামের কৃষক তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, গতবার আমি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। যে টাকা খরচ করেছিলাম সেটাও আসেনি। তাই এবার পাট চাষ করিনি।
চাষিদের দাবি, পাটের ফলন ভালো হলেও চাষিরা নানা সমস্যায় ভোগেন। আগের বছরগুলোতে অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নালাগুলোতে পানি ছিল না। যে কারণে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যায় পড়েছিলেন। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে পুকুর ভাড়া করে সেখানে পানি দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। তাতে খরচ আরও বেড়ে যায়। অনেকেই জমিতেই বাঁধ তৈরি করে পানি জমিয়ে কাদামাটি দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষক। খাল-বিল সংস্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখলে পাট পচানো সম্ভব। এর ফলে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামের কৃষক সবুজ আলী বলেন, পাট পচানোর জন্য কোনো উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষিরা এই ফসল চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খাল-বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উন্মুক্ত ঘোষণা করলে পাট চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা পাট চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর কৃষকরা পাট চাষ কম করেছেন। আশা করছি, দাম ভালো পেলে আগামীতে পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবি করিমুন্নেছা বলেন, সরকার পাট চাষ ও বীজ উৎপাদনে কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। পাটের আবাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দখল হয়ে যাওয়া খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয় উদ্ধারে কাজ চলছে।
কুষ্টিয়া জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বলেন, পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে পাটের আবাদ কমেছে। আশা করছি, আগামীতে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো দৃশ্যের সেই বিতর্ক নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মন্দাকিনী
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা বলেন, পাটের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাট চাষিদের পাট পচানোর সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাট চাষ বৃদ্ধিতে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।