জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে পাটের ভালো ফলন হলেও, দাম না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারদর নিম্নমুখী হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। চাষিরা বলছেন, নায্য দাম না পাওয়া গেলে পাট চাষ থেকে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- জেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ বিঘা বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পাটের আবাদ আর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক পাট বিক্রি করে লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাজারে কাঙ্খিত দাম না পেয়ে তারা এখন হতাশ হচ্ছেন।
কৃষকরা বলছেন- পাট চাষের শুরুর দিকে আশানুরূপ বৃষ্টি হলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে অনাবৃষ্টির দেখা দেয়। এতে সেচ নির্ভর হতে হয় তাদের। ফলে পাট চাষে খরচ বেড়ে যায়। এমনিতে সার-কিটনাশক, শ্রমিক খরচও আগের চেয়ে বাড়তি ছিল। অন্যদিকে পাট কেটে জাগ দিতেও বাড়তি শ্রমিক খরচ হয়েছে তাদের। অনাবৃষ্টিতে খাল-বিলে পানি না থাকায় দূর-দূরান্তে যেখানে পানি ছিল, সেখানে জাগ দিতে নিতে হয়েছে পাট। এতে পরিবহন খরচও বেড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হন তারা। প্রথমত বীজ রোপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ রোপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ মৌসুমের শুরুর দিকেই বাজারে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাট চাষি লালচান ইসলাম বলেন, গতবছর পাটের দাম পেয়ে এলাকার কৃষকরা লাভবান হলেও, এবার কৃষক তার পরিচর্যা খরচই জোগান দিতে পারছে না। উল্টো পুঁজি হারাতে বসেছেন চাষিরা । এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পাটগাছ আশানুরূপ বাড়েনি। আগে বিঘায় অন্তত ১০ মণ পাট হতো, কিন্তু এবার বিঘায় মাত্র ৩ থেকে ৪ মণ পাট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- তিন ধরনের পাটের দাম রয়েছে বাজারে। ভালো মানের পাটগুলোকে এ-গ্রেড বলা হয়। এই পাট বাজারে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ, বি-গ্রেডের পাট প্রায় ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং সি-গ্রেডের মানের পাট ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
পাইকাররা বলছেন, এ বছর পাট জাগ দেয়ার উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি হয়নি। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে বিড়ম্বনায় পড়েন কৃষক। যে কারণে যত্রতত্র জায়গায় কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের তেমন কোনো মান নেই।এ কারণে এ-গ্রেডের পাটের খুবই সংকট। অথচ মিলগুলোয় এ-গ্রেডের পাটের চাহিদা বেশি।
পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি পাট কিনে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কিন্তু এ বছর বড় বড় মোকামে বেচাকেনা না থাকায় পাটের দাম কমে গেছে। মোকামে পাটের চাহিদা না বাড়লে পাটের দাম বাড়বে না বলেও তিনি জানান।
তিনি জানান, গত বছর ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে জেলার কৃষকরা পাট বিক্রি করেছিলেন। গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবারও কৃষকরা পাটে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই স্বপ্ন এখনও অধরা রয়ে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি অর্থকরী ফসল পাট। গত বছর ৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে এই ফসলটি চাষ হয়েছিল। এবার জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০৫ হেক্টরে। কিছুটা দেরিতে হলেও এরই মধ্যে জেলার অধিকাংশ খেতের পাটই কাটা শেষ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা পাট ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন।
এক চার্জেই চলবে টানা ১৪০ কিমি, পানির দামে পাচ্ছেন এই দুর্ধর্ষ ইলেকট্রিক স্কুটার
তিনি আরও জানান, প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা পাট কিনতে আসতেন। এখনও তারা পাট কিনতে আসেনি ফলে কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পাইকাররা না আসলে, পাট বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।