জুমবাংলা ডেস্ক: যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কামিনী গাছের চাষ করছেন অনেক কৃষক। তবে তারা কামিনী ফুলের জন্য এ চাষ করছেন না। বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য গাছের পাতাসহ ডাল বিক্রি করা। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক রাকিব হাসনাত-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে ফুলের চেয়ে বেশি লাভ পাওয়া যায় কামিনীর পাতাসহ ডাল বিক্রি করে এবং সেটিই দেশের নানা জায়গার কৃষককে এখন উদ্বুদ্ধ করছে কামিনী চাষে। তারা সফলতাও পাচ্ছেন এটি চাষ করে।
যশোরের গদখালী এলাকা দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুলের জন্য বিখ্যাত এবং দেশের অন্যতম বড় ফুলের বাজারও সেখানে।
গদখালী গ্রাম ও আশপাশের হাজার হাজার একর জমিতে বছরজুড়ে উৎপাদন হয় দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল, যার বার্ষিক বাজার মূল্য সেখানকার ব্যবসায়ীদের হিসেবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এই গ্রামের ফুল সারাদেশ তো বটেই, যাচ্ছে বিদেশেও।
সেখানেই ফুল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যেখানেই ফুলের বাজার বা দোকান দেখা যাবে সেখানেই কামিনীর ডালের দরকার হয়। এটি ছাড়া ফুল ব্যবসা করা যাবে না।
‘ফুলের ডেকারেশন এখন নানা অনুষ্ঠান ছাড়াও অফিস সাজসজ্জাতেও ব্যবহার হচ্ছে। সব কিছুতেই সাথে দরকার হয় কামিনীর পাতাসহ ডাল,’ বলছিলেন তিনি।
সম্প্রতি নিজের পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য বাসায় ফুলের ডেকোরেশন করিয়েছিলেন বেসরকারি চাকুরীজীবী কানিজ ফাতেমা।
‘বাসা সাজাতে মনে হয় ফুলের চেয়ে বেশি লেগেছে কামিনীর ডালই। এটা ছাড়া ফুলের সৌন্দর্য্যটাও ঠিক ফোটে না,’ বলছিলেন তিনি।
বাজার কত বড়
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেছেন, ফুলের যে কোনো তোড়া বানাতে বা ফুল দিয়ে যে কোনো ধরণের ডেকোরেশন কোথাও দরকার হলে সেখানে এই কামিনী পাতা লাগবেই।
‘দেশে বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠান, গাড়ি সাজানো, মঞ্চ সাজানো কিংবা অসংখ্য কাজে ফুলের যত তোড়া হবে সবকিছুতেই এটা লাগবে। এ পাতাটি সহজে পচে না এবং সহজে নরম হয় না। সব মিলিয়ে এর বিশাল মার্কেট আছে,’ বলছিলেন তিনি। তবে কৃষককে চাহিদার জায়গা বুঝে এটি উৎপাদনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ফুলের দোকানগুলো মূলত এর ক্রেতা। তাই কৃষককেই বুঝতে হবে কোথায় কেমন চাহিদা।
‘যদিও ফুল যেমন গাছে রেখে দেয়া যায় না, কামিনীর ডালের ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। এটি পচবে না বা নষ্ট হবে না। তাই এটি চাষে ঝুঁকি কম,’জুবায়ের বলছিলেন। তিনি বলেন, গাছটিতে পানি দেয়া আর সার দেয়া ছাড়া বিশেষ কোনো পরিচর্যা করতে হয় না বলে এটি লাভজনক।
জুবাইর মনে করেন, শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের জন্য কামিনী চাষ একটি দারুণ উদ্যোগ হতে পারে। আবার যারা নিয়মিত ফুলের তোড়া কেনেন উপহার দেয়া বা শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তারাও জানেন যে ফুলের সাথে এ পাতা মিলে অন্যরকম সৌন্দর্য্য তৈরি করে।
স্কুল শিক্ষিকা নাহার বেগম বলছেন, ফুলের তোড়ায় কামিনীর ডাল না থাকলে ফুলগুলো খুব বেশি সময় সজীব থাকে না।
আর শিক্ষার্থী লাবনী খাতুন বলছেন, ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার পথে শাহবাগের ফুলের দোকানে কামিনীর ডাল দেখেছেন। কিন্তু এটা যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি তিনি জানতেন না।
এক চাষে বছরের পর বছর আয়
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাগানপাড়ার ফুল চাষি শাহীন নুর রশীদ বলেন, যে ছয় বছর ধরে তিনি জারবারা ছাড়া বাণিজ্যিক সব ফুলের পাশাপাশি কামিনীর চাষ করছেন।
‘আমার ফুলের দোকান আছে। তোড়া বানাতে বা ডেকোরেশনে এটি দরকার হতো। বিভিন্ন জায়গা থেকে খুঁজে আনতাম। পরে নিজেই চাষ করি। কিন্তু তখনো এর চাহিদা বুঝতে পারিনি,’ বলছিলেন তিনি।
একদিন অন্য জায়গা থেকে একজন ফুল ব্যবসায়ীর ফোন পান তিনি। ফোনে ওই ব্যবসায়ী জানতে চান যে শাহীন নুর রশীদের এলাকায় কেউ কামিনী চাষ করছে কিনা। মূলত তখনি তিনি জানতে পারেন যে প্রতিটি ফুলের দোকানের জন্য অপরিহার্য্য হলো এই কামিনীর পাতাসহ ডাল।
‘এরপর চাষ বাড়িয়ে দেই ও চট্টগ্রামসহ নানা জায়গায় বিক্রি করতে শুরু করি। একবার গাছ লাগালে বছরের পর বছর ডাল পাওয়া যায়। একটি ডাল কাটলে সেখানে আরো কয়েকটি ডাল বের হয়।’ যশোরের গদখালীর আব্দুর রহিম বলেছেন, ডাটা ও আঁটি হিসেবে কামিনীর ডাল বিক্রি হয়। একটি আঁটিতে ১০/১৫টি ডাল থাকে।
বাজারভেদে মূল্য আলাদা হলেও গড়ে প্রতিটি ডাটা কমপক্ষে দুই টাকা দরে বিক্রি করেন অনেক কৃষক। যেখানে যত চাহিদা সেখানে তত দাম। কোনো কোনো জায়গায় তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় একটি ডাল।
সাধারণ যে ডালে পাতা বেশি সে ডালের তত বেশি দাম হয়ে থাকে। এছাড়া কামিনী গাছে তুলনামূলক রোগ বালাই কম হয়ে থাকে বলে তেমন একটা খরচ হয় না।
শাহীন নুর রশীদ বলেন, কামিনীর কয়েকটা জাত আছে। তবে তারা মোটা পাতার কামিনীর চাষ করেন কারণ এতে লাভ বেশি হয়।
‘বছরে বিঘা প্রতি কমপক্ষে এক লাখ টাকা আয় হয়। আর একবার চাষ করলে বছরের পর পর ডাল পেতে থাকি। তবে ফুলের সাথে দেয়া ছাড়া এটা আর কোনো কাজে লাগে না,’ বলছিলেন তিনি।
গাছ রোপণ করা হলে এক বছর পর থেকেই গাছের ডাল বিক্রির জন্য কাটা যাবে। আবার গরমের সময় প্রতি দুই মাস পরপর আর শীতের সময় সাড়ে তিন মাস পরপর কামিনীর ডাল কাটা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।