জুমবাংলা ডেস্ক : আগামী মার্চ মাসে চালু হতে পারে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) এরই মধ্যে স্থাপনাটি চালুর প্রস্তুতি শুরু করেছে। জনবল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করছে। পরিচালনার শর্ত অনুযায়ী পণ্য ওঠা-নামায় ব্যবহত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তারাই সংগ্রহ করবে।
টার্মিনালটি পুরোদমে চালু হলে বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা। কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের কনটেইনার)। গত বছর দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে।
বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে পিসিটি। শুরুতে এটি বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে এমন সিদ্ধান্ত থাকলেও পরে সেখান থেকে সরে এসে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর বিশ্বের খ্যাতনামা বন্দর পরিচালনাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে। শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবের আরএসজিটি এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তারা শর্তসাপেক্ষে আগামী ২২ বছর টার্মিনাল পরিচালনা করবে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আরএসজিটি’র সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অবশ্য তার আগেই টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে এখানে পণ্যও খালাস করা হয়। আরএসজিটি বিশ্বের অন্যতম বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। তারা জেদ্দা বন্দরসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘চুক্তি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টার্মিনাল চালু করতে আরএসজিটি প্রস্তুতি নিচ্ছে। চুক্তির তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি। টার্মিনাল চালাতে বড় আকারের যেসব সরঞ্জাম লাগবে তার মধ্যে অন্যতম গ্যান্ট্রি ক্রেন। এই ক্রেন আনতে হয়তো সময় লাগবে। অন্যান্য সরঞ্জাম তারা কম সময়ের মধ্যেই নিয়ে আসতে পারবে। গ্যান্ট্রি ক্রেন আসতে দেরি হলেও কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। সেক্ষেত্রে ক্রেনযুক্ত জাহাজ জেটিতে ভেড়াতে হবে।’
পিসিটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অপর এক কর্মকর্তা জানান, আরএসজিটি কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। তারা হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কনটেইনার হ্যান্ডলিং শুরু করতে পারে। তবে পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হতে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে পিসিটি’র কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে তিনটি কনটেইনার ও একটি তেল খালাসের (ডলফিন) জেটি রয়েছে। এগুলোতে একসঙ্গে চারটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। কনটেইনার জেটির দুটিতে অত্যাধুনিক ‘কি গ্যন্ট্রি ক্রেন’ থাকবে। যেখানে ভিড়তে পারবে গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) জাহাজ এবং অপরটিতে গিয়ার্ড (ক্রেনযুক্ত) জাহাজ।
পণ্য খালাসের অপেক্ষায় জাহাজকে দীর্ঘদিন বসে থাকতে হবে না। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে আসবে। এখানে সমুদ্রের গভীরতা বেশি থাকায় ভেড়ানো যাবে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজ। ১০ মিটার ড্রাফট (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারবে জেটিতে। পরীক্ষামূলকভাবে ২০০ মিটার লম্বা একটি জাহাজ এরই মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে ভেড়ানো হয়েছে। এছাড়া ছয় হাজার কনটেইনার একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যাবে ইয়ার্ডে।
পিসিটি চালু হলে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা পাবেন নতুন আরেকটি টার্মিনাল। ২০০৬ সালে বন্দরের সর্বশেষ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছিল। প্রতি বছর দেশের আমদানি-রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও দীর্ঘদিন যাবৎ সেই তুলনায় বাড়েনি চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো। তাই আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।