সিলেটে সাদা পাথর লুটপাটে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নাম এসেছে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চার ইউএনও, থানার ওসি ও বিজিবি সদস্যদের নামও। পাথর লুটের ঘটনায় দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি করা হয়- পাথর লুটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাভোগী ছিলেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগে ৪২ জন নেতা ও ব্যবসায়ী।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর পর্যটন স্পট থেকে কয়েক মাসে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুট হয়। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়- পাথর লুট প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়নি খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থরক্ষা করেছেন। লুটপাট ঠেকাতে সদিচ্ছা দেখাননি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করা চার ইউএনও আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ও বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধেও লুটপাট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম ১৩ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে।
তারা ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও প্রতিবেদনের কপি গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।
পাথর লুটে নাম আসায় বিষয়টিকে ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও এনসিপির সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন।
এদিকে পাথর লুটপাটের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ ইউএনও আজিজুন্নাহারকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা সার্কিট হাউসে বিদায়ী জেলা প্রশাসক মাহবুব মুরাদ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম। এ সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খাঁন মোহাম্মদ রেজাউল নবীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে সাদাপাথর পরিদর্শন শেষে
সারওয়ার আলম বলেন, লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধার, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং স্থায়ীভাবে পাথর চুরি ঠেকাতে কাজ করা হবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক সিলেটের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাৎ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, গত ১৩ আগস্ট এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা নিয়ে ১৬ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবারও লুট হওয়া পাথর উদ্ধার অব্যাহত ছিল। র্যাব-৯ এর অভিযানে বিকালে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকা থেকে প্রায় ৩৭ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। তবে পাথর জব্দের সময় তার মালিককে পাওয়া যায়নি বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় র্যাব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।