আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জিম প্রশিক্ষকের সঙ্গে প্রেম। বহু দিন সম্পর্কে থাকার পর প্রণয়ের সম্পর্কে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চাইছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ঊর্বশী বৈষ্ণব। কিন্তু সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে চাওয়াই কাল হয়ে দাঁড়াল ২৭ বছর বয়সি মেয়েটির জীবনে। বিয়ে করতে চেয়েছেন বলে প্রেমিকের হাতেই খুন হলেন তিনি।
মুম্বাইয়ের ধামানি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গাদি নদী। হঠাৎ এক দিন নদীর তীরে ভেসে উঠল এক মহিলার মৃতদেহ। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে পানভেল থানার পুলিশ এই খুনের তদন্ত শুরু করে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্ত চলাকালীন সমস্যার মুখে পড়ে তারা। দুর্ঘটনাস্থলে কোনও সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় হাতে তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছিল না পুলিশ।
এই খুনের রহস্য কী করে সমাধান করতেই তাদের মাথায় এক অভিনব পরিকল্পনা আনে। মৃতদেহের পায়ে যে ব্র্যান্ডের জুতো ছিল, তার দিকে নজর পড়ে পুলিশের। সেই সূত্র ধরেই এগিয়ে নিয়ে যায় তদন্ত।
নাভি মুম্বাই এলাকায় ওই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জুতোর যত দোকান রয়েছে, পুলিশ সব দোকানে গিয়ে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে। এক সপ্তাহ ধরে এই অনুসন্ধান চালায় তারা। শেষ পর্যন্ত বাশী এলাকার এক জুতোর দোকানে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মৃতদেহের সঙ্গে মিল খুঁজে পান। দোকান থেকেই ঊর্বশীর খোঁজ নেন পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ধরা পড়ে, ঊর্বশীর পাশে এক দশাসই চেহারার লোকও রয়েছেন। দোকানে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, ঊর্বশী ওই ভদ্রলোকটির সঙ্গে ৮ দিন আগে দোকানে জুতো কিনতে এসেছিলেন। লোকটির চেহারা দেখে তাকে ‘বডিবিল্ডার’ বলে ভেবেছিল পুলিশ। তাই বাশী এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা কোপারখৈরানের সমস্ত জিমখানায় তল্লাশি চালায় তারা।
তল্লাশি চালানোর পর পুলিশ জানতে পারে, কোপারখৈরানের একটি জিমে প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন ওই ব্যক্তি। তার নাম রিয়াজ খান। বয়স ৩৬ বছর। দেওনর থেকে রিয়াজকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় অপরাধ কবুল করেন রিয়াজ। স্বীকার করেন, তিনি নিজের হাতে তার প্রেমিকা ঊর্বশীকে গলা টিপে খুন করেছেন। খুন করে গাদি নদীর জলে দেহটি ফেলে দেন বলেও জানান রিয়াজ।
তবে রিয়াজ একা নন, তার বন্ধু বছর ছাব্বিশের ইমরান শেখও এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোবন্দি এলাকা থেকে ইমরানকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। ক্যুরিয়ার ডেলিভারি করার কাজ করতেন ইমরান। তার দাবি, ঊর্বশীর দেহ নদীর জলে ফেলে দিতে রিয়াজকে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
কিন্তু ঊর্বশীর সঙ্গে বহু দিন সম্পর্কে থাকার পর কেন তাকে খুন করলেন রিয়াজ, সেই প্রসঙ্গে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। রিয়াজের বক্তব্য, ঊর্বশীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রিয়াজ। সম্পর্কে আসার আগে থেকেই বিবাহিত রিয়াজ। এক জন নয়, ৩ জন মহিলাকে বিয়ে করেছেন তিনি। ঊর্বশী পানশালায় কাজ করতেন। সেই পানশালায় নিয়মিত যেতেন রিয়াজ। সেখানেই আলাপ হয় ২ জনের। রিয়াজ এবং ঊর্বশীর বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে।
মেলামেশা বাড়তে থাকায় রিয়াজ-ঊর্বশীর বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। ঊর্বশী বিয়ের প্রস্তাবও দেন রিয়াজকে। কিন্তু রিয়াজ কোনও মতেই ঊর্বশীকে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। তাই ঊর্বশীকে প্রাণ মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন রিয়াজ।
পানভেল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঊর্বশীর খুনে অভিযুক্ত ২ জনকে পানভেল আদালতের তরফে এখনও পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।