স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। অবশেষে আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন এই বিশ্ব ফুটবলের রাজা।
দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই কিংবদন্তি। বছরান্তে এমন বিদায়ে ফুটবল বিশ্ব শোকে মুহ্যমান।
পেলের মৃত্যুতে ফুটবলের পৃথিবী জুরে চলছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের তারকারা। শোকগাঁথায় করছে নানা স্মৃতিচারণ।
শেষ বিদায়ের আগে পেলের অর্জনে এমন কিছু রেকর্ড গড়ে গেছেন যা অনেককেই অবাক করবে। এমনকি তার করা এই রেকর্ড ভাঙতে পারবে না আর কোনো ফুটবলার।
চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক পেলের এমন ছয়টি রেকর্ডে যেগুলো সহসাই ভাঙতে পারবে না আর কেউ।
১. ব্যালন ডি’অর প্রাপ্তি:
পেলে তার ক্যারিয়ারে কখনো ব্যালন ডি’অর জিতেননি কখনোই। তবে ২০১৪ সালে ফিফা তাকে বিশেষ সম্মাননা জানায় সাম্মানিক ব্যালন ডি’অর প্রদানের মাধ্যমে।
তিনি ছাড়া আর কেউ এই বিশেষ সম্মাননা পায়নি। ভবিষ্যতে সহসাই কেউ এমন সম্মাননা পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
২. হ্যাটট্রিক:
ক্যারিয়ার জুড়ে ১ হাজার ২৮১ গোল করা পেলে হ্যাটট্রিক করেছেন রেকর্ড ৯২টি। যা ভাঙা এক প্রকার অসম্ভবই বটে।
কারণ, তার রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মোট হ্যাটট্রিক ৫৬টি। আর লিওনেল মেসির ৫৩টি।
বর্তমান সময়ের এই দুই সেরা তারকার ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার পরতির দিকে। বয়স বিবেচনায় তাদের পক্ষে পেলের রেকর্ড ভাঙা তো দূরের কথা ছোঁয়াও হয়তো সম্ভব হবে না।
৩. এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট:
পেলে এমনই একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি গোল করার সমানতালে অ্যাসিস্টও করেছেন। বল পায়ে তিনি ছিলেন গতিময়, শক্তিশালী, অসাধারণ, দক্ষতাপূর্ণ এবং উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন। দলে তার অনুপস্থিতি ভালোভাবে টের পাওয়া যেত। ইনজুরির কারণে যে বিশ্বকাপে তিনি খেলেননি সে বিশ্বকাপে ব্রাজিল গ্রুপপর্বের গণ্ডিও পেরুতে পারেনি। লম্বা সময়ের ইনজুরি কাটিয়ে ১৯৭০ বিশ্বকাপে ফিরে তিনি ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতেন।
ওই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাতটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। যা এখনো অক্ষুন্ন। হয়তো সহসাই কেউ এই রেকর্ড ভাঙতে পারবে না।
৪. বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক:
১৯৫৮ বিশ্বকাপে দলে নেওয়া হয়েছিল ১৭ বছর বয়সী পেলেকে। তখন অনেকেই বলেছিল মারমুখী ফুটবলে কিশোর পেলের পা ভেঙে ফেলবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা। কিন্তু সেই কিশোরই কিনা ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছিলেন।
ওই বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করার অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। যা ৬৪ বছর ধরে অক্ষুন্ন। আধুনিক ফুটবলে এতো অল্প বয়সে বিশ্বকাপের আসরে খেলে পেলের রেকর্ড ভাঙাটা বেশ কঠিনসাধ্য কাজই হবে।
৫. সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ জয়:
১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। তার পর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জেতা হয়তো কঠিন হবে বর্তমান সময়ের ফুটবলে।
৬. একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়:
ফুটবল বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিন-তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। এবার যদি এমবাপ্পে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিততেন তাহলে তার রেকর্ড ভাঙার একটি সম্ভাবনা তৈরি হতো।
কিন্তু ফ্রান্স রানার্স-আপ হওয়ায় পেলের এই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ১৯৫৮ সালে প্রথম, ১৯৬২ সালে দ্বিতীয় এবং ৮ বছর পর ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের হয়ে তিনি জিতেছিলেন তৃতীয় বিশ্বকাপ এবং গড়েছিলেন অনন্য এক কীর্তি। যা ৫২ বছর ধরে অক্ষত আছে।
২০১৩ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ পেলেকে সর্বোচ্চ গোল ও সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়ে সনদপত্র প্রদান করেছিল।
২০২২ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত পেলে দীর্ঘ ৫১ বছর এককভাবে ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে নেইমার তাকে ছুঁয়ে ফেলেন। নেইমার ১২৪ ম্যাচ খেলে করেন ৭৭ গোল।
আর পেলে ৭৭ গোল করেছিলেন মাত্র ৯২ ম্যাচ খেলে। নেইমার যদি জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলেন তাহলে পেলের এই রেকর্ডটি অধরাই থাকবে হয়তো। আর খেললে ভেঙে যাবে পেলের একটি কঠিনসাধ্য রেকর্ড।
বিশ্বে সবচেয়ে দামি ফুটবলার এখন রোনালদো, আয় ২ হাজার কোটিরও বেশি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।