জুমবাংলা ডেস্ক : বিগত ১৫ বছরে দেশে মাথাপিছু আয়ে রেকর্ড উত্থান ঘটেছে। এই উত্থানে শুধু পাকিস্তানকেই নয়, ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। এ সময়ে মাথাপিছু আয় ৬৮৬ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে পৌঁছেছে।
মূলত এই উত্থানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকার। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের সাড়ে তিন বছরে এই আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে সেনা শাসকদের আমলে এই আয় বৃদ্ধি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। সেনা শাসকদের ১৬ বছরে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়ে মাত্র ছয় ডলার। এর মধ্যে জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ মাসে উল্টা মাথাপিছু আয় ১৫ শতাংশ কমে যায়। খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের শাসনামলে এই আয় ১০২ ডলার এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তা বাড়ে মাত্র ৯৩ ডলার। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে মাথাপিছু আয় বাড়ে ২ হাজার ১০৭ ডলার। ব্যাপক উত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই মাথাপিছু আয় বিশ্বে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে, যা দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ‘উন্নয়নের এক বিস্ময়’ বা মিরাক্যাল অর্থনীতির দেশ। যার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আজ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
মূলত, আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০২৩ সালে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই দেশের ১৯৭২ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯১ ডলার। এই মাথাপিছু আয় নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন শুরু করেন। ফলে জাতির পিতার সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময়ের শাসনামলে মাথাপিছু আয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলে ২০৪ শতাংশ বা তিনগুণ বেড়ে ১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে উন্নীত হয়। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তিনি দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার আমলে ১৯৭৩ সালে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪ মার্কিন ডলার এবং ১৯৭৪ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭২ ডলারে। ১৯৭২ সালে টাকা-ডলারে বিনিময় হার ছিল সাত দশমিক সাত যা ১৯৭৫ সালে ১২ দশমিক ১৮-এ পৌঁছায়।
এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে মাথাপিছু আয় বাড়ে মাত্র ছয় ডলার। ওই সময়জুড়ে বাংলাদেশ শাসন করেন সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সময়কালে বৃদ্ধির পরিবর্তে উল্টা বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ফলে ১৯৯০ সালে মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে পৌঁছতে ১৫ বছর সময় লাগে। যদিও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের এই মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল।
সামরিক স্বৈরশাসকদের দ্বারা শাসিত সেই সময়কালে মাথাপিছু আয় অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী ছিল। কারণ, এটি ছিল ১৯৭৬ সালে ১৩২ ডলার, ১৯৭৭ সালে ১২৩ ডলার, ১৯৭৮ সালে ১৬৬ ডলার, ১৯৭৯ সালে ১৯০ ডলার, ১৯৮০ সালে ২১৬ ডলার, ১৯৮১ সালে ২৩৫ ডলার, ১৯৮২ সালে ২১৬ ডলার, ১৯৮৩ সালে ১৯৩ ডলার, ১৯৮৪ সালে ২০২ ডলার, ১৯৮৫ সালে ২৩২ ডলার, ১৯৮৬ সালে ২২১ ডলার, ১৯৮৭ সালে ২৪১ ডলার, ১৯৮৭ সালে ২৪১ ডলার, ১৯৮৮ সালে ২৫৮ ডলার, ১৯৮৯ সালে ২৭৪ ডলার, ১৯৯০ সালে ২৯৪ ডলার ও ১৯৯১ সালে ২৮৩ ডলার।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুই অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যান, যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ছিল খুবই ব্যতিক্রমী। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মূল কারণ প্রবাসী বাংলাদেশী ও তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন খাতে দেশের মেহনতি মানুষের অবদান।
তিনি বলেন, দেশের কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাদের কৃষিকাজ পরিচালনা করছেন। ফলে ফসলের ফলন বেশি হচ্ছে ও মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন- যা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, লাখ লাখ পুরুষ ও নারী শ্রমিক বছরের পর বছর ধরে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য শিল্প খাতে কাজ করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি উল্লম্ফনের এটাও অন্যতম প্রধান কারণ।
পরিকল্পনামন্ত্রী সর্বোপরি অর্থনীতির এই উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। এই নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের এই দেড় দশকে টানা তিন মেয়াদে দেশের প্রধান সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন কল্যাণমুখী কর্মকা-ের পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। তাদের মাথাপিছু আয় ও জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে মাথাপিছু আয় মাত্র ১০২ ডলার বৃদ্ধি পায়। কারণ ১৯৯২ সালে ২৮৫ ডলার থেকে ১৯৯৬ সালে এটি ৩৮৭ ডলারে পৌঁছেছিল।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে ৩৯৫ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০০১ সালে ৪১০ ডলারে উন্নীত হয়। যদিও সেই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দার চলছিল, ২০০১ সালের মার্চ থেকে সেই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ে।
এরপর ২০০১ থেকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার বৃদ্ধি পায়। কারণ, মাথাপিছু আয় ২০০২ সালে ৪০৭ ডলার থেকে ২০০৬ সালে মাত্র ৫০৩ ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধির পায়। ২০০৯ সালে ৬৮৬ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২৩ সালে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে পৌঁছেছে।
ক্রয়ক্ষমতার সমতার (পিপিপি) ওপর মাথাপিছু আয় বিবেচনায় আয়ও ২০২৩ সালে পাঁচগুণ বেড়ে ৮ হাজার ৭৭৯ ডলার হয়েছে, যা ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ১ হাজার ৭২৪ ডলার ছিল।
বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও কৌশল বাস্তবায়নের ভিত্তিতে মাথাপিছু আয় ধীরে ধীরে ২০১০ সালে ৭৭৬ ডলার, ২০১১ সালে ৮৫৬ ডলার, ২০১২ সালে ৮৭৭ ডলার, ২০১৩ সালে ৯৭৪ ডলার, ২০১৩ সালে ১ হাজার ১০৯ ডলার, ২০১৪ সালে ১ হাজার ১০৯ ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২৩৬ ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৬৬০ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮১৬ ডলার, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৯৬৩ ডলার, ২০১৯ সালে ২ হাজার ১২২ ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ২৩৩ ডলার, ২০২১ সালে ২ হাজার ৪৫৮ ডলার, ২০২২ সালে ২ হাজার ৬৮৮ ডলার ও ২০২৩ সালে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।