জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের হিলিতে প্রথমবারের মতো ক্যানসার প্রতিরোধী ব্ল্যাক রাইসসহ ঔষধি গুণসম্পন্ন চার জাতের ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। নতুন ও আগাম জাতের এই ধানের ভালো ফলন হলে আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় চাষ করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। নতুন এই ধান চাষে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ বলছে, ঔষধিগুণসম্পন্ন ব্ল্যাক রাইসের চাহিদা বাড়ছে। চাষিরা প্রতিকেজি ধান ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন। আর এক বিঘা জমি থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ধান পাওয়া সম্ভব।
হিলি থেকে বোয়ালদাড় গ্রামে যেতে সড়কের পাশেই চোখে পড়বে নতুন এই জাতের ধানের জমি। ধানের রঙয়ের কারণে সড়ক দিয়ে চলাচলরত মানুষসহ অন্যান্য কৃষকদের মনে কৌতূহল বেড়েছে। অনেকেই রাস্তা থেকে জমিতে নেমে ধান ও গাছ নেড়ে দেখছেন, আবার অনেককে ছবি তুলতেও ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে।
এই জমিতে ব্ল্যাক রাইস ধানের চাষ করেছেন স্থানীয় মেহেদি হাসান। বিভিন্ন ব্যাংক ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ১৮ বছর চাকরি করে গ্রামে ফিরে অপ্রচলিত ও দামি ধান চাষের কাজ শুরু করেন মেহেদি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে চায়না ও ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক রাইস, ফাতেমা এবং জিংক সমৃদ্ধ বেগুনি রঙের ধান চাষ শুরু করেছেন।
মেহেদি হাসান বলেন, আমি একজন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা, এর আগে আমি নতুন কিছু ফলের জাত চাষ করেছি। এবারই প্রথম ব্ল্যাক রাইস নামের নতুন ধান চাষ শুরু করেছি। আমি এখানে চায়না ও ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক রাইস লাগিয়েছি। এছাড়া জিংক সমৃদ্ধ বেগুনি রঙের ধান এবং ফাতেমা জাতের ধান লাগিয়েছি। এসব জাতের ধান আমি নাটোরের ইমরান, ঢাকার মোক্তাদির ও পার্বতীপুরের সায়েদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি। নিজে পাঁচ বিঘা জমিতে এসব জাতের ধান লাগিয়েছি। আর আমার দুই পার্টনার দুই বিঘা করে চার বিঘা জমিতে এসব ধান লাগিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস সব ধরনের পরামর্শসহ সহযোগিতা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি পরীক্ষামূলকভাবে ভালো ফলনের আশায় ধান লাগিয়েছি। যেভাবে ধান ধরেছে তাতে আমি ভালো ফলনের আশাবাদী। আর এসব ধানের দাম অনেক। জিংক সমৃদ্ধ বেগুনি রঙয়ের ধান ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা মণ। যদি বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ মণ ধান পাওয়া যায় তাহলে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাওয়া যাবে। আর ফাতেমা জাতের ধান বিঘাপ্রতি ফলন হবে ৪০ মণ করে। এটি এক হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারলে আসবে ৪০ হাজার টাকা। আর সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ব্ল্যাক রাইস পাঁচ- ছয়শ’ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
মেহেদি বলেন, শুনেছি ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধী ব্ল্যাক রাইস খেতে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমার চাষ দেখে অন্য এলাকার কৃষকরাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তারাও এখন আমার দেখাদেখি এই জাতের ধান লাগানোর আশায় আছেন। তারা আমার থেকে বীজ নিতে চাইছেন। তাই এবারের উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে দেওয়ার চিন্তা করছি।
বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক সিদ্দিক হোসেন বলেন, প্রথম যখন এই ধান রোপণ করা হয় তখন লালচে বর্ণের হয়। পরবর্তীতে যত দিন গড়ায় ও গাছ যখন বড় হয় তখন সেটি কালো রঙ ধারণ করে। ধানের রঙ দেখে প্রথমে মনে হয় ধানের গাছগুলো পুড়ে গেছে।
কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ব্ল্যাক রাইস একেবারে নতুন ধরনের ধান। এই ধান আগাম জাতের। এ কারণে এই ধান চাষ শেষে কৃষকরা রবিশস্যের আবাদ করতে পারেন। আমিও আগামীতে এই ধান চাষাবাদের চিন্তা করছি।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জানতে পেরেছি ব্ল্যাক রাইসের দাম অনেক ভালো। আগাম ধান উঠে আাসার কারণে যেসব কৃষক জমিতে রবিশস্য লাগায় তাদের জন্য সুবিধা হবে। সে হিসেবে দেখছি যে এই নতুন জাতের ধানটি লাগানো যায়।
কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদি বাজারজাতের বিষয়ে জানান, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন চেইন শপের সঙ্গে আমার চাল বিক্রি নিয়ে কথা হয়েছে। ওই সব শপে প্রতিকেজি চাল ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গাজীপুরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে এই ধান প্রক্রিয়াকরণের মেশিন দেখতে যাবো। প্রয়োজনে চাল প্রক্রিয়ার মেশিন কেনার চিন্তা রয়েছে। পরে ধান থেকে চাল আকারে বিক্রির চিন্তা করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রথামিকভাবে যে ধান পাবো তা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বীজ আকারে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। বেশি আকারে উৎপাদন হলে সবারই লাভ হবে। আর কৃষকদের ধান আমিই কিনবো। যে কারণে তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় এবারই প্রথম ব্ল্যাক রাইস ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। মেহেদি হাসান নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা নতুন এই জাতের ধান লাগিয়েছেন। ধানের গাছ ভালো হয়েছে, তাতে আশা করছি বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ করে এই ধানের ফলন পাবেন কৃষক। এই জাতটি একেবারেই নতুন ও অনেক প্রসিদ্ধ একটি ধানের জাত। এই ধানে অ্যান্টিসায়োরিন রয়েছে যেটি কিনা ক্যানসার প্রতিরোধী। এছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও জিংকের সঙ্গে প্রোটিনের পরিমাণও ভালো থাকে, আছে সোডিয়াম। সবমিলে এই ধানের চাল শরীরের জন্য উপকারী। নতুন এই ধানের চাষ থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বভিাগ। ইতোমধ্যে মেহেদির দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি ধানের নতুন এই জাতটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ বলেন, ব্ল্যাক রাইস অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণসম্পন্ন। এটি ক্যানসারসহ নানা রোগের বিপরীতে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই আমরা এ বিশেষ চাল গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে খুবই দামি হওয়ায় এই চাল খাবার হিসেবে গ্রহণ সবার জন্য সম্ভব হয় না। তবে উৎপাদন বাড়লে সাধারণ মানুষের জন্য এটি আশীর্বাদ হবে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।