খুলনা অঞ্চলের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ছয়টি, সাতক্ষীরার একটি ও যশোরের একটি প্রতিষ্ঠান এই বছর থেকেই চাষের অনুমতি পেয়েছে। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানকে অবকাঠামো সংস্কারের প্রতিবেদন দাখিলের পর ভেনামি চাষের নির্দেশনা দিয়েছে মৎস্য অধিদফতর।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্র জানায়, বিশ্ব বাজারের ৮০ শতাংশ দখলে রাখা ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির ‘বাণিজ্যিক’ চাষের অনুমতি নেই। তাই চিংড়ির বিশাল বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। শুধু পাইলট প্রকল্প হিসেবে উৎপাদনের অনুমতির কারণে চাষি, উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকরা ব্যাংকের ঋণ সুবিধাও পাচ্ছেন না। ফলে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ খাতে বিনিয়োগও করতে পারছেন না। এ অবস্থায় পাইলট প্রকল্পের স্থলে ভেনামি চিংড়ির ‘বাণিজ্যিক’ উৎপাদনের দাবি জানিয়ে আসছেন রফতানিকারকরা।
রফতানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির পোনা এনে খুলনা অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয় মৎস্য অধিদফতর।
অনুমতি পাওয়া আট প্রতিষ্ঠান হলো—এমইউ সি-ফুডস, ফাহিম সি ফুডস, গ্রোটেক অ্যাকোয়াকালচার লিমিটেড, রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার, আইয়ান শ্রিম্প কালচার, ইএফজি অ্যাকোয়া ফার্মিং, জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও প্রান্তি অ্যাকোয়া কালচার লিমিটেড। এর মধ্যে গত ৯ মে এমইউ সি-ফুডস থাইল্যান্ড থেকে ১২ লাখ ভেনামি জাতের পোনা আমদানি করে পাইকগাছার লবণ পানি গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে চাষ শুরু করেছে।
অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটার আলহেরা মৎস্য প্রকল্প, কালীগঞ্জের নলতা আহসানিয়া ফিস লিমিটেড এবং খুলনার রূপসার ফ্রেস ফুডস লিমিটেড ও জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড। অবকাঠামো সংস্কার হলে দ্রুত এই চারটি কোম্পানিকেও ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া কক্সবাজারে আরেও চারটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শিগগিরই ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করবে বলে বিএফএফইএ সূত্র জানিয়েছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য মৎস্য অধিদফতরে আবেদন করেছিল। এর মধ্যে অনুমোদন পায় ১২টি। এই বছরে চাষের অনুমোদন আটটি প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, ভেনামি চিংড়ির জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং উৎপাদন খরচ কম। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতা ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০১৯ ও ২০২০ সালে চাষ শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত বছর মার্চ থেকে খুলনার পাইকগাছার লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ির চাষ শুরু হয়।
প্রথম বছর পরীক্ষামূলক চাষের জন্য বিনিয়োগ করেছিল এমইউ সি-ফুডস লিমিটেড। এ বছরও পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত সোমবার ওই প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ড থেকে ১২ লাখ ৬ হাজার ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানি করে পুকুরে ছেড়েছে। বাকি সাতটি প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুতি নিচ্ছে পোনা আমদানির।
এমইউ সি-ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ‘প্রথম চালানে আনা চিংড়ি পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের চারটি পুকুরে চাষ করা হয়। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আরও বেশি চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরও ইতোমধ্যে পাইকগাছার ওই পুকুরে মাছ ছাড়া হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।